সিসা দিয়ে শুরু, তরুণ-তরুণীরা জড়াচ্ছে ভয়ংকর মাদকে

কামরুজ্জামান খান
4 Min Read
ক্যাসিনো ‘সম্রাট’ সেলিম প্রধানসহ নয়জন বারিধারার একটি বার থেকে গ্রেপ্তার। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর অভিজাত এলাকাগুলোতে চুপিচুপি চলছে অনুমোদনহীন সিসা বার। আলো-আঁধারে বন্ধ কক্ষে দিনরাত চলে সিসা সেবন। আর সিসার ধোঁয়ায় মগ্ন হয়ে বাড়ি ফেরেন আসক্তরা। ধনাঢ্য পরিবারের তরুণ-তরুণীরা নিয়মিত এসব বারে যাতায়াত করছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) তালিকায় ২১টি সিসা বারের নাম থাকলেও, পুলিশের তথ্য অনুযায়ী এসব এলাকার সংখ্যা অনেক বেশি। সিসা বারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকের সঙ্গে ডিএনসি ও পুলিশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার কারণে অভিযান ব্যর্থ হচ্ছে। এ ছাড়া নাম-ঠিকানা বদলে চলছে এসব ব্যবসা।

শনিবার ক্যাসিনো সম্রাট সেলিম প্রধানসহ নয়জন বারিধারার একটি বার থেকে গ্রেপ্তার হওয়ার পর সিসা বার আবারও আলোচনায় এসেছে। এর আগে ১৪ আগস্ট বনানীর ‘৩৬০ ডিগ্রি’ নামের এক সিসা বারে খুন হন রাব্বি নামে এক যুবক।

গুলশানে এক তারকা দম্পত্তির ছেলের রেস্তোরাঁর আড়ালে পরিচালিত সিসা বারে একাধিক অভিযান পরিচালিত হয়েছিল।

বিশেষজ্ঞরা জানান, সিসা এক ধরনের মাদক এবং এটি তরুণ-যুবকদের পাশাপাশি তরুণী ও যুবতীদের মধ্যে বেশি আসক্তি সৃষ্টি করছে। ধনাঢ্য পরিবারের সন্তানেরা এই নেশায় বেশি ঝুঁকছে। অনেকে বাসায় বসেও সিসা সেবন করছে।

ডিএনসির কেন্দ্রীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগারের প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক ড. দুলাল কৃষ্ণ সাহা জানান, সিসা বারগুলোতে লেডি কিলার, লাভ সিক্সটি সিক্স, হ্যাভানা লাইট, অরেঞ্জ মিন্ট ও স্ট্রবেরি নামক যেসব ফ্লেভার ব্যবহার হয়। তার মধ্যে দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ নিকোটিন রয়েছে।

ধূমপানবিরোধী সংগঠন মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার (মানস) সভাপতি ডা. অরুপ রতন চৌধুরী বলেন, ‘সিসা এক ধরনের নেশা। তরুণ-যুবকদের পাশাপাশি তরুণী ও যুবতীরা এতে বেশি আসক্ত। ধনাঢ্য পরিবারের সন্তানেরা এই নেশায় বেশি ঝুঁকছেন। অনেকে বাসায় বসেও সিসা সেবন করছেন।

ডিএনসি ও পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে সবচেয়ে বেশি সিসা বার রয়েছে বনানী এলাকায়। বনানীতে ‘আল গ্রিসিনো’, ‘লাল সোফা’, ‘কিউডিএস’, ‘রিলোডেট’, ‘ফিউশান হান্ট’, ‘ব্ল্যাক ব্রিচ কিচেন অ্যান্ড লাউঞ্জ’, ‘গোল্ডেন টিউলিপ’, ‘এআর লাউঞ্জ’, ‘প্লাটিনাম’, ‘মিন্ট আলট্রা লাউঞ্জ’, ‘আরগিলা’, ‘টিজেএস’, ‘পেট্টাস’ এবং ‘ফারহান নাইট’সহ ২২টি সিসা বার চলছে। গুলশানে ‘মন্টানা লাউঞ্জ’, ‘ডাউন টাউন’ ও ‘কোর্ট ইয়ার্ড বাজার’সহ ছয়টি সিসা বার রয়েছে।

ডিএনসি ঢাকা মেট্রো কার্যালয়ের (উত্তর) উপপরিচালক শামীম আহমেদ জানান, আমাদের তালিকায় ২১টি সিসা বার রয়েছে, তবে এর বাইরেও আরও সিসা বার থাকতে পারে।

তিনি বলেন, অভিজাত এলাকাগুলোর সিসা বারের দোকানগুলোতে দরজা বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে, রাস্তায় মোড়ে মোড়ে লোক রেখে, সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে ব্যবসা চালানো হয়। অভিযানের পর তারা দমে গেছে, তবে ভেতরে সোর্স থাকার কারণে অভিযানের আগেই তথ্য ফাঁস হয়ে যায়।

এদিকে, সেলিম প্রধানের সিসা বারের ব্যাপারে ডিএনসি তথ্য পায় বৃহস্পতিবার। পুলিশ শনিবার রাতে অভিযান চালায়। বনানীর সিসা বারে যুবক খুন এবং পুলিশ ও ডিএনসির অভিযানের ফলে ঢাকায় সিসা বারের সংখ্যা কমে এসেছে বলে দাবি করা হয়।

দেশে ক্যাসিনোকাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধানসহ নয়জনকে শনিবার ভোরে বারিধারার ১২ নম্বর সড়কের ৪৩ নম্বর বাড়ির ‘নেক্সাস ক্যাফে’ নামের একটি রেস্তোরাঁ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ৬ দশমিক ৭ কেজি সিসা এবং সাতটি সিসা স্ট্যান্ডসহ অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশের গুলশান অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) আল আমিন হোসাইন জানান, নেক্সাস ক্যাফে নামের রেস্তোরাঁয় অবৈধ সিসা বার চালানো হচ্ছিল। সেলিম প্রধান ওই রেস্তোরাঁর মালিক ছিলেন।

গুলশান থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, সেলিম প্রধানের সূত্র ধরে আরও অনেককে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে। গোয়েন্দা কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং আরও সিসা বারের সন্ধানে অভিযান চলছে।

ভাটারা থানার অফিসার ইনচার্জ রাকিবুল হাসান বলেন, ‘বারিধারা ও বসুন্ধরা এলাকায় অনৈতিক বা অসামাজিক কার্যক্রম রোধে গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে। গোপনে কিছু ঘটানোর চেষ্টা করলে পুলিশ দ্রুত অভিযান চালায় এবং সিসা বার নিয়ে সবসময় সতর্ক।’

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *