ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য খুন হয়েছেন মাদক কারবারিদের ছুরিকাঘাতে, এমনটাই দাবি করেছে পুলিশ। একটি খাবারের দোকানে ‘ট্রেজারগান’ নিয়ে বিরোধ ও ধস্তাধস্তির সময় সাম্যকে ছুরিকাঘাত করা হয় বলে গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের জবানবন্দিতে এসেছে। তবে পুলিশের এ দাবি প্রত্যাখান করেছেন সাম্যের ভাই সরদার আমিনুল ইসলাম।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৩ মে রাতে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী এস এম শাহরিয়ার আলম সাম্য (২৫)। তিনি ঢাবি ছাত্রদলের নেতা ছিলেন। এ হত্যার ঘটনায় পুলিশ শুরুতে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল। পরে আরো ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। সব মিলিয়ে ১১ জনকে গ্রেপ্তার করার পর পুলিশ দাবি করেছে, সাম্য হত্যার রহস্য উদঘাটন হয়েছে। যদিও আলোচিত মামলাটির তদন্ত চলমান।
মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী আলোচিত এ হত্যার আসামি গ্রেপ্তারসহ নানা বিষয় তুলে ধরেন।
সাজ্জাত আলী বলেন, ‘সাম্য হত্যার রহস্য উদঘাটন হয়েছে। ট্রেজারগান দেখতে চাওয়ায় শাহরিয়ার আলম সাম্যকে মাদক ব্যবসায়ী চক্র ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে।’
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘ঢাবি প্রক্টরের ফোনে রাত দু্ইটায় আমার ঘুম ভাঙার পর রমনা জোনের ডিসিকে ফোন দিই। এই ঘটনার রহস্য উদঘাটনে আমরা সব সময় তৎপর ছিলাম। কক্সবাজার মুন্সীগঞ্জসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিভিন্ন ধরনের খাবার বিক্রি হয়। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর পাশাপাশি বাইরের লোকজনও আসেন। সে রাতে সাম্য ও তার দুই সহপাঠী দোকানের ভেতরে ঢুকতে গেলে মাদক কারবারিদের হাতে ট্রেজারগান দেখতে পান। দূর থেকে ইলেকট্রিক শক দিতে ব্যবহার হয় ট্রেজারগান। সাম্য তাদের কাছে গিয়ে ট্রেজারগান দেখতে চাইলে এ নিয়ে ধস্তাধস্তি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এক পর্যায়ে তারা সাম্যকে স্পর্শকাতর স্থানে ছুরিকাঘাত করে, দ্রুত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়।’
আঘাত পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘আসলে সেনসিটিভ জায়গায় আঘাত করা হয়েছে। ওখানে আঘাত করলে রক্তক্ষরণে ২-৩ মিনিটের মধ্যে মৃত্যু হয়।’
হত্যাকাণ্ডে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা সবদিক থেকে বিচার-বিশ্লেষণ ও তদন্ত করছি। এমন কিছু পেলে জানাব। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত দুজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। অন্য আসামিরা রিমান্ডে রয়েছে। আরো তথ্য উদঘাটনে নিবিড়ভাবে তদন্ত করা হচ্ছে।’
পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ডের রাতে তামিম হাওলাদার (৩০), সম্রাট মল্লিক (২৮) ও পলাশ সরদার (৩০) নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সর্বশেষ গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮ জনকে। তারা হলেন- মো. রাব্বি ওরফে কবুতর রাব্বি (২৫), মেহেদী হাসান (২৫), নাহিদ হাসান পাপেল (২১), মো. রিপন (২০), মো. সোহাগ (৩৩), মো. রবিন (১৮), মো. হৃদয় ইসলাম (২৪) ও সুজন সরকার (২৭)।
এদিকে পুলিশ সাম্য হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে, এমন তথ্য জেনে মঙ্গলবার বিকেলে ডিবি কার্যালয়ে হাজির হন সাম্যের বড় ভাই সরদার আমিনুল ইসলাম।
তিনি পুলিশের দাবিতে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘সাম্য হত্যা পরিকল্পিত। পুলিশের দেয়া বক্তব্যের সঙ্গে গ্রেপ্তারকৃতের আদালতে দেয়া জবানবন্দি মিলছে না। রাজনৈতিক কারণে তাকে হত্যা করা না হলে, অন্য কারণে হত্যা করা হতে পারে। তবে পুলিশের দাবি করা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাম্যকে খুন করা হয়নি। পুলিশের এ দাবি আমি প্রত্যাখান করছি।’
গত ১৩ মে রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় শাহরিয়ার আলম সাম্যকে ছুরিকাঘাত করে একদল দুর্বৃত্ত। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় রাত ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মারা যান তিনি। এর পর ১৪ মে সাম্যের বড় ভাই শরীফুল ইসলাম শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।