বাবা আদম মসজিদ কালের সাক্ষী এক ঐতিহাসিক স্থাপত্য। মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার দরগা বাড়ি গ্রামে প্রায় সাড়ে পাঁচশ বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক স্থাপনাটি।
সুলতানি আমলের নিদর্শনটি এই অঞ্চলের ইতিহাসের এক জীবন্ত দলিল। মসজিদটি তার ঐতিহাসিক তাৎপর্যের কারণে ইতিহাসপ্রেমী ও পর্যটকদের কাছে এক বিশেষ আকর্ষণ। বিক্রমপুরের শাসক মালিক কাফুর শাহ ১৪৮৩ সালে ধর্ম প্রচারক ‘বাবা আদম’র স্মৃতি ধরে রাখতে এ মসজিদটি নির্মাণ করেন।
১৯৪৮ সাল থেকে প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তর এই মসজিদটি দেখভাল করছে।
টাইমস অব বাংলাদেশের সঙ্গে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা কামাল হোসেনের। তিনি বলেন, ‘আরব থেকে ‘‘বাবা আদম’’ নামে এক আউলিয়া এই অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করতে এসেছিলেন। তৎকালীন শাসক ‘‘বল্লাল সেন’’ তাকে হত্যা করেন। এর কয়েকশ বছর পর মালেক কাফুর এই মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন।’
মসজিদের স্থাপত্যশৈলী সুলতানি আমলের বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। ছোট আকারের এই ইটের তৈরি মসজিদটির রয়েছে তিনটি গম্বুজ। মাঝের গম্বুজটি তুলনামূলকভাবে বড় ও এর কারুকার্য বিশেষভাবে লক্ষণীয়। চারপাশের দেওয়ালগুলোতে আছে পোড়ামাটির অলংকরণ। টেরাকোটার কারুকার্য মসজিদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে বহুগুণ। লতাপাতা, ফুল, জ্যামিতিক নকশা এবং বিভিন্ন মোটিফের ব্যবহার তৎকালীন শিল্পকলার এক চমৎকার উদাহরণ। মসজিদের ভেতরের মেহরাব ও দেয়ালগুলোতেও রয়েছে কারুকার্য।
মসজিদটি কালের বহু উত্থান-পতন দেখেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং অযত্নের কারণে মসজিদের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও মূল কাঠামো টিকে আছে। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ বিভিন্ন সময় মসজিদটির সংস্কারও করেছে।
‘বাবা আদম’ মসজিদ শুধু একটি ঐতিহাসিক স্থাপত্যই নয়, এটি স্থানীয় জনজীবনের সঙ্গেও গভীরভাবে জড়িত। ঐতিহাসিক এই মসজিদটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকেরা আসেন।
মসজিদের আশেপাশে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি এবং এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি বলে মনে করেন স্থানীয়রা। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে এই অমূল্য সম্পদকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাঁচিয়ে রাখার তাগিদও দেন অনেকেই।
মসজিদের খতিব মাওলানা মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক এই মসজিদ নাতিশীতোষ্ণ হওয়ায় এখানে অনেকে নামাজ পড়তে পছন্দ করেন।’
মুন্সীগঞ্জের ‘বাবা আদম’ মসজিদ কেবল একটি ইমারত নয়, এটি মুসলিম ইতিহাসের প্রতিচ্ছবি। এর স্থাপত্যশৈলী, ঐতিহাসিক তাৎপর্য, স্থানীয় মানুষের বিশ্বাস ও ভালোবাসার মেলবন্ধন এটিকে এক বিশেষ স্থান করে তুলেছে।