সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথি: আসলে কী হয়েছে?

টাইমস রিপোর্ট
3 Min Read
সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথি আগুনে পুড়ে যাওয়ার খবর, যমুনা টিভির নিউজ পোর্টালের স্ক্রিন শট।
Highlights
  • ডিএমপি ফেসবুকের অফিসিয়াল পেজে 'বিশেষ বিবৃতি'তে জানায়, 'বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারিত সাগর-রুনী হত্যা মামলার নথিপত্র ডিবি হেফাজতে পুড়ে যাওয়ার তথ্যটি সঠিক নয়।'

১৩ বছর ধরে ঝুলে থাকা সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার নথিপত্র নিয়ে নানা রকম তথ্য মিলছে।

মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) সকালে এ মামলা শুনানীতে রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট আরশাদুর রউফ তদন্ত শেষ করতে নয় মাস সময় চান। এ সময় তিনি আদালতে বলেন, ‘তদন্তের অগ্রগতি হয়েছে। আরো সময় দরকার। ৫ অগাস্টে ডিবি অফিসে আগুন দেওয়া হয়। তখন অনেক রেকর্ড পুড়ে গেছে।’

তৎক্ষণিকভাবে বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেলের টিকারেও হালনাগাদ তথ্য হিসেবে আলোচিত এ মামলার নথি পুড়ে যাওয়ার খবর প্রচার করা হয়। বেলা ১২টার দিকে ‘যমুনা টিভি’র নিউজ পোর্টালেও একই খবর প্রকাশিত হয়।

আদালতে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলের ওই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে টাস্কফোর্সের অধীনে মামলা তদন্তের দায়িত্বে থাকা পিবিআই বিবৃতিতে জানায়, ‘কেউ কেউ ডিবির নথি পুড়ে যাওয়ার নিউজ করছেন তা সঠিক নয়। আগুনে পুড়ে যাওয়ার কথা বলা হয় নি। অ্যাডিশনাল অ্যাটর্নি জেনারেল জনাব আরশাদ রউফ বলেছেন, ডিবির অধিকাংশ অফিসার বদলি হওয়ায় পুরনো নথি ও ডকুমেন্টস খুঁজে পাওয়া সময় সাপেক্ষ।’

সবশেষ, বেলা পৌনে ২টার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ফেসবুকের অফিসিয়াল পেজে সংক্ষিপ্ত ও ‘বিশেষ বিবৃতি’তে জানায়, ‘বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারিত সাগর-রুনী হত্যা মামলার নথিপত্র ডিবি হেফাজতে পুড়ে যাওয়ার তথ্যটি সঠিক নয়।’

ভিন্ন একটি সূত্র বলছে, আলোচিত ওই হত্যা মামলার নথি অনেক আগেই ডিএমপির ডিজিটাল আর্কাইভে সংরক্ষিত রয়েছে। এ সব নথি একাধিক আইনশৃংখলা বাহিনীর কাছে আছে।

এদিকে, আদালতে ওই মামলার শুনানী শেষে মামলার তদন্ত শেষ করতে আরও ছয় মাস সময় পেয়েছে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স। হাইকোর্টের বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত এ সময় বৃদ্ধি মঞ্জুর করে এবং আগামী ২২ অক্টোবর আদেশের জন্য পরবর্তী দিন ধার্য করে।

এর আগে, গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট সাগর-রুনি হত্যা মামলায় তদন্তে অগ্রগতি না থাকায় বিভিন্ন সংস্থার অভিজ্ঞদের নিয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ দেয়। একই সঙ্গে ছয় মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়।

এ দিন নির্ধারিত সময় পার হলেও প্রতিবেদন জমা না দেওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষ আরও নয় মাস সময় চাইলেও আদালত ছয় মাস সময় দেয়।

মামলার শুরু থেকে একাধিক দফায় তদন্তকারী সংস্থা পরিবর্তন হয়েছে। প্রথমে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ, পরে ডিএমপির গোয়েন্দা শাখা এবং শেষ পর্যন্ত র‍্যাবের হাতে তদন্তভার দেওয়া হয়। তদন্তে অগ্রগতি না থাকায় এক পর্যায়ে হাইকোর্ট ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল মামলাটির দায়িত্ব র‍্যাবকে দেয়।

রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আখতার হোসেন মো. আবদুল ওয়াহাব। বাদীপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে নিজেদের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন ‘মাছরাঙা টিভি’র বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও ‘এটিএন বাংলা’র সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনি। এ ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

দীর্ঘ ১৩ বছরেও আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটিত না হওয়ায় শুরু থেকেই সমালোচনার মুখে রয়েছে তদন্ত সংস্থাগুলো। এখন অপেক্ষা—টাস্কফোর্সের এই বাড়তি সময় আদৌ কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি এনে দিতে পারে কিনা।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *