‘সাংবাদিক পরিচয় পেয়েও গুলি করেন এডিসি দস্তগীর’

টাইমস রিপোর্ট
3 Min Read
সিলেটে সাংবাদিক তুরাব হত্যা মামলায় ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে গ্রেপ্তার করা হয় পুলিশের সাবেক এডিসি গোলাম সাদেক দস্তগীরকে। ফাইল ফটো

সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) গোলাম সাদেক দস্তগীরকে হাত উঁচিয়ে গুলি না করার অনুরোধ করেছিলেন সিলেটের দৈনিক একাত্তরের কথার ফটোসাংবাদিক মো. মোহিদ হোসেন। তবুও পুলিশ গুলি চালায়, এবং গুলিবিদ্ধ হয়ে সিলেটের সাংবাদিক এ টি এম তুরাব মারা যান।

সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ দেওয়া জবানবন্দিতে এসব তথ্য তুলে ধরেন মোহিদ হোসেন। তিনি জানান, গত বছরের ১৯ জুলাই সিলেটে বিএনপির গায়েবানা জানাজা কর্মসূচির সময় এই ঘটনা ঘটে।

মোহিদ হোসেন জবানবন্দিতে বলেন, ‘আমি হাত উঁচিয়ে বলছিলাম, “দস্তগীর ভাই, আমরা সাংবাদিক, আমাদের গুলি করবেন না”, কিন্তু পুলিশ গুলি চালিয়ে যায়।’

এই ঘটনায় পুলিশের গুলিতে তার সহকর্মী তুরাব গুলিবিদ্ধ হন।

সাংবাদিক তুরাব হত্যা মামলায় ২০২৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার করা হয় সাবেক এডিসি গোলাম সাদেক দস্তগীরকে।

জবানবন্দিতে সাংবাদিক মোহিদ বলেন, ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই সিলেটের মধুবন পয়েন্টে কালেক্টরেট জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত গায়েবানা জানাজার পর শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি জিন্দাবাজারের দিকে যাওয়ার সময় পুলিশ অতর্কিতে গুলি চালায়।

মোহিদ হোসেন জানান, পুলিশের গুলিতে সহকর্মী আবু তুরাব গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে পড়ে যান। প্রথমে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়, কিন্তু পুলিশ ও আওয়ামী লীগের লোকজন চিকিৎসায় বাধা দিলে তাকে বেসরকারি ইবনে সিনা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে মারা যান তুরাব।

মোহিদ হোসেন আরও জানান, সাবেক এডিসি সাদিক কাউসার দস্তগীর, সাবেক এসি মিজানুর রহমান, সাবেক ওসি মহিউদ্দিনসহ আরও কয়েকজন পুলিশ গুলি চালিয়েছেন।

চব্বিশের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে দশম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়।

সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বিচারিক প্যানেলে হয় এ সাক্ষ্যগ্রহণ।

এর আগে, ২৬ আগস্ট নবম দিনের পাঁচ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়। এদিন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মফিজুর রহমান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. মনিরুল ইসলাম, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডা. মোস্তাক আহমেদ, ফেনীর ব্যবসায়ী আহত নাসির উদ্দিন ও শহীদ শাহরিয়ার খান আনাসের নানা মো. সাঈদুর রহমান জবানবন্দি দেন। এখন পর্যন্ত মোট জবানবন্দি দিয়েছেন ২৯ জন সাক্ষী।

জবানবন্দি শেষে শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন তাদের জেরা করেন। ট্রাইব্যুনালের পক্ষে ওইদিন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এসএইচ তামিম শুনানি করেন। এ সময় প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, প্রসিকিউটর মঈনুল করিম, আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্যান্যরা সঙ্গে ছিলেন।

২৫ আগস্ট সাক্ষ্য গ্রহণের অষ্টম দিনেও জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরী, একই হাসপাতালের রেটিনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাকিয়া সুলতানা নীলা, শহীদ মারুফ হোসেনের বাবা মোহাম্মদ ইদ্রিস, লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী আমেনা আক্তার ও শহীদ আব্দুর রাজ্জাক রুবেলের মা হোসনে আরা বেগমসহ পাঁচজনের জবানবন্দি রেকর্ড করেন ট্রাইব্যুনাল।

এর আগের দিন সাক্ষ্য দেন রংপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের অফিস সহকারী গিয়াস উদ্দিন এবং মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রাজিবুল ইসলাম ও কুষ্টিয়ার স্থানীয় সাংবাদিক শরিফুল ইসলাম।

 

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *