সড়ক দুর্ঘটনার শীর্ষে মোটরসাইকেল

admin
By admin
4 Min Read
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। ছবি: ফাইল ছবি
Highlights
  • ১১ হাজার ৭২৫টি দুর্ঘটনায় নিহত ১১ হাজার ৮৬৪ জনই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার—অর্থাৎ দুর্ঘটনা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। গড় হিসেবে, প্রতি ১০০টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছেন ১০১ জনের বেশি।

বাংলাদেশে মোটরসাইকেলের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হারও। বিশেষজ্ঞ ও নিরাপত্তা কর্মীরা বলছেন, বেপরোয়া চালানো, দুর্বল আইন এবং চালকদের সচেতনতার অভাবই এসব মৃত্যুর প্রধান কারণ।

সড়ক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহতদের বড় অংশই ১৪ থেকে ৪৫ বছর বয়সী তরুণ–যারা দেশের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর বড় অংশ।

পরিসংখ্যান বলছে, এখন মোট সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ৩৫ শতাংশের বেশি মোটরসাইকেলের। আর বিশ্বে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুহারে বাংলাদেশ রয়েছে শীর্ষ দেশগুলোর তালিকায়। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৩০ হাজার ৭৭৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৩ হাজার ২৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

২০২০ সালের করোনা মহামারির শুরুতে লকডাউনের মধ্যেও সড়কে মৃত্যুহার ছিল বেশি। ২০২০ সালে পাঁচ হাজার ৪৩১, ২০২১ সালে ছয় হাজার ২৮৪, ২০২২ সালে সাত হাজার ৭১৩, ২০২৩ সালে ছয় হাজার ৫২৪ এবং ২০২৪ সালে সাত হাজার ২৯৪ জন প্রাণ হারান সড়কে।

এ সময়ে ১১ হাজার ৭২৫টি দুর্ঘটনায় নিহত ১১ হাজার ৮৬৪ জনই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার—অর্থাৎ দুর্ঘটনা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। গড় হিসেবে, প্রতি ১০০টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছেন ১০১ জনের বেশি।

‘নিরাপদ সড়ক চাই’র প্রতিষ্ঠাতা ও  অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘সড়কে তরুণরা ব্যাপক হারে মারা যাচ্ছেন। তাদের সঠিক প্রশিক্ষণ নেই, তারা ট্রাফিক আইন মানে না, এমনকি নিজেরা যে কতটা ঝুঁকি নিচ্ছেন, তা-ও তারা বোঝেন না।’

দুর্ঘটনা রোধে কঠোর আইন প্রয়োগের পাশপাশি ব্যাপক সচেতনতামূলক কার্যক্রমের আহ্বান জানান।

সারাদেশে, বিশেষ করে শহরাঞ্চলে, মোটরসাইকেল চালকদেরকে প্রায়ই ব্যস্ত সড়কে বেপরোয়া গতিতে ছুটতে দেখা যায়। দ্রুতগতিতে ওভারটেক করতে গিয়ে প্রায়ই তারা পড়ছেন দুর্ঘটনার কবলে।

এই ঈদেও পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ। যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানিয়েছে, ২৪ মার্চ থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত ১৩৫টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৫১ জনের মৃত্যু হয়—প্রতি ১০০টি দুর্ঘটনায় ১১১ জন মারা গেছেন, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যুহার ছিল যথাক্রমে: ২০২০ সালে এক হাজার ৪৬৩, ২০২১ সালে দু’হাজার ২১৪, ২০২২ সালে তিন হাজার ৯১, ২০২৩ সালে দু’হাজার ৪৮৭ জন, ২০২৪ সালে দু’হাজার ৬০৯ জন।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের ২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহতদের ৭৫.২৩ শতাংশের বয়স ১৪ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে।

দুর্ঘটনার কারণ: মুখোমুখি সংঘর্ষ ২৩, নিয়ন্ত্রণ হারানো ৩৮.১৭ এবং ভারী যানবাহনের সঙ্গে সংঘর্ষ ৩৭ শতাংশ।

দুর্ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মোটরসাইকেল চালকের দোষ ছিল ৩৬.৬৫ শতাংশ এবং বাস ও ট্রাক চালকদের দোষ ছিল ৪৭.৬৬ শতাংশ। আঞ্চলিক মহাসড়কে এসব দুর্ঘটনা ঘটেছে প্রায় ৪০ শতাংশ।

দেশের সড়কে এখন যেন মোটরসাইকেলই প্রধান যানবাহন। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)-এ জানিয়েছে, ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশের মোট নিবন্ধিত যানবাহনের ৭৩ শতাংশই মোটরসাইকেল। ৬৩.৪ লাখ নিবন্ধিত যানবাহনের মধ্যে ৪৬.৬ লাখই মোটরসাইকেল, যার মধ্যে গত এক দশকে নিবন্ধিত হয়েছে ৩৪ লাখ।

বছরভিত্তিক মোটরসাইকেল নিবন্ধনের সংখ্যা যথাক্রমে–২০২০ সালে তিন লাখ ১১ হাজার ১৬টি, ২০২১ সালে তিন লাখ ৭৫ হাজার ২৫২টি, ২০২২ সালে পাঁচ লাখ ছয় হাজার ৯১২টি, ২০২৩ সালে তিন লাখ ১০ হাজার ৪১৮টি এবং ২০২৪ সালে দুই লাখ ৬২ হাজার ৭১৫টি।

বিআরটিএ কর্মকর্তারা জানান, সড়কে চলছে এরচেয়ে অনেক বেশি মোটরসাইকেল, অনিবন্ধিত গাড়ির সংখ্যাও কম নয়।

বিআরটিএ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইয়াসিন টাইমস অব বাংলাদেশকে জানান, বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া মোটরসাইকেল বিক্রি বন্ধের পাশাপাশি যানবাহনের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই এ জন্য করা হবে নিয়ন্ত্রণমূলক নীতিমালা।

বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. শামসুল হক বলেন, ‘গুরুতর দুর্ঘটনায় চালকরা প্রায়ই ঘটনাস্থলেই মারা যান। জরুরি চিকিৎসার অপ্রতুলতাও বাড়িয়ে তোলে প্রাণহানির সংখ্যা।’

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘যেসব দুর্ঘটনার খবর আসছে, প্রকৃত দুর্ঘটনার সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি হতে পারে।’

‘আমরা শুধু সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য ব্যবহার করি। কিন্তু যদি জেলা হাসপাতালগুলোর পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে হতাহতের সংখ্যা কয়েক গুণ বাড়বে।’

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, ‘মহাসড়ক ও আঞ্চিলক সড়কে মোটরসাইকেলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ না করলে বেপরোয়া দুর্ঘটনা ও মৃত্যু কোনোমতেই কমানো যাবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আইন প্রয়োগ ও সচেতনতা জরুরি, তবে তা সড়ক পরিকল্পনা ও অবকাঠামো উন্নয়নের সঙ্গে হতে হবে সমন্বিত।’

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *