নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় সব কারখানা অঘোষিতভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। গোটা এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় মোতায়েন করা হয়েছে সেনাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য।
বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার (বেপজা) কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শ্রমিক-মালিক ও প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে বৃহস্পতিবারের মধ্যে বন্ধ থাকা ২৪টি কারখানা ফের সচল করার চেষ্টা চলছে।
নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল জব্বার জানান, সম্প্রতি ‘এভারগ্রিন বিডি’ নামের একটি পরচুলা তৈরির কারখানায় ৫১ শ্রমিককে ছাটাই করে কর্তৃপক্ষ। এর জেরে ছাঁটাই বন্ধসহ ২৩ দাবিতে সোমবার থেকে আন্দোলন নামেন ওই শিল্পকারখানার শ্রমিকেরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গত সোমবার গভীর রাতে কোম্পানি বন্ধের নোটিশ দেয় কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার সকালে কাজে যোগ দিতে গিয়ে এভারগ্রিন কারখানার শ্রমিকেরা ওই নোটিশ দেখতে পান।
এর প্রতিবাদে ইপিজেডের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে মূল সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। পরে আন্দোলনরত শ্রমিকদের শান্ত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হলে তাদের সঙ্গে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে জড়ান বিক্ষুব্ধরা।

ওই সংঘর্ষে হাবিব (২০) নামের এক শ্রমিক নিহত হন। তিনি ইপিজেডের ইকু ইন্টারন্যাশনাল নিটিং ফ্যাক্টরির শ্রমিক ছিলেন। এছাড়া সংঘর্ষের ঘটনায় দুই নারীসহ সাত শ্রমিক আহত হন। তাদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ তিনজন রংপুর মেডিকেলে ও অন্যরা নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ওই সংঘর্ষে দুইজন আনছার সদস্য, সাতজন পুলিশ, চার সেনা ও বেপজার একজন নিরাপত্তারক্ষী আহত হয়েছেন।
বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, শ্রমিক হত্যার ঘটনায় প্রতিবাদে ‘এভারগ্রিন বিডি’ ছাড়াও ইপিজেডের ২৪টি কারখানার সব কার্যক্রম দুপুর ১২টার পর থেকে বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। নির্বাহী পরিচালকের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বুধবার উদ্ভুত পরিস্থিতি বিবেচনা করে বৃহস্পতিবার কারখানাগুলো খুলে দেওয়া হবে কি না এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ জন্য জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ জেলা বিএনপি, জেলা জামায়াত, জেলা এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের মধ্যস্থতায় সংকট নিরসনের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, নীলফামারী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমআর সাঈদ জানান, ‘নিহত শ্রমিকের মরদেহ অনুমতি ছাড়াই তার পরিবারের সদস্য ও বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে যায়। রাতেই ময়নাতদন্ত ছাড়া তার মরদেহ দাফন করা হয়।
নীলফামারী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘মঙ্গলবার দুপুরেই সেনাবাহিনী, বিজিবি, ইপিজেড কর্তৃপক্ষ, এভারগ্রিন কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও শ্রমিক সংঘঠনের সঙ্গে বৈঠক করে। শ্রমিকদের ২৩ দফা দাবির বিষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে।’
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, ‘শ্রমিকদের সব অভিযোগ তদন্তে বেপজা একটি কমিটি গঠন করবে। এছাড়া শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার পাশাপাশি হতাহতদের ক্ষতিপুরণ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’