চলে গেলেন দেশবরেণ্য সংগীতশিল্পী, সুরকার, সংগীত বিষয়ক অধ্যাপক, গবেষক ও লেখক মুস্তাফা জামান আব্বাসী। শনিবার ভোরে ঢাকার বনানীতে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।

মুস্তাফা জামান আব্বাসীর বড় মেয়ে সংগীতশিল্পী সামিরা আব্বাসী। বাবার সঙ্গে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে তিনি লিখেছেন, ‘আমার সোনার চান পাখী… আর দেখা হবে না ?’
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন মুস্তাফা জামান আব্বাসী। শুক্রবার শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ভাওয়াইয়া সম্রাট আব্বাসউদ্দিন আহমেদের কনিষ্ঠ পুত্র ছিলেন মুস্তাফা জামান আব্বাসী। ১৯৩৬ সালের ৮ ডিসেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমান ভারত) পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহার জেলায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর বড় ভাই মোস্তফা কামাল ছিলেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি। বোন ফেরদৌসী রহমান ছিলেন প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী।
মুস্তাফা জামান আব্বাসী ভারতীয় শাস্ত্রীয়সংগীত শিল্পী ওস্তাদ মুহম্মদ হোসেন খসরু ও ওস্তাদ গুল মোহাম্মদ খাঁর কাছে সংগীতে তালিম নিয়েছেন। গান গাওয়ার পাশাপাশি এই সংগীতজ্ঞ অর্ধশত বই লিখেছেন। লোকজ সংগীতের গবেষণায় তাঁর ভূমিকা অপরিসীম। সংগীতে অবদানের জন্য ১৯৯৫ সালে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদকে ভূষিত হন মুস্তাফা জামান আব্বাসী। এছাড়া ‘চ্যানেল আই নজরুল মেলা’য় আজীবন সম্মাননাসহ অনেক স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনি।
মুস্তাফা জামান আব্বাসী ছিলেন একাধারে সংগীতশিল্পী, সংগ্রাহক, উপস্থাপক, গবেষক, সাহিত্যিক, অনুবাদক ও দার্শনিক। বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) জন্য তার উপস্থাপনায় ‘আমার ঠিকানা’ ও ‘ভরা নদীর বাঁকে’ অনুষ্ঠান দুটি দর্শকপ্রিয় ছিল।
ব্যক্তিজীবনে মুস্তাফা জামান আব্বাসী ১৯৬৩ সালের ২০ জানুয়ারি বিয়ে করেছেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীর ভাতিজি, শিক্ষাবিদ ও লেখক আসমা আব্বাসীকে। তাদের দুই মেয়ে সামিরা আব্বাসী ও শারমিনী আব্বাসী। সামিরা লোকসংগীত, নজরুলসংগীত ও আধুনিক গানের চর্চা ও গবেষণা করছেন।