শিল্পী দেবাশিস চক্রবর্তীর ‘জুলাই প্রিলিউড’

টাইমস রিপোর্ট
3 Min Read
শিল্পী দেবাশিস চক্রবর্তীর ‘জুলাই প্রিলিউড’। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক

শিল্পী দেবাশিস চক্রবর্তী জুলাই প্রিলিউড সিরিজের ৯ থেকে ১০ নম্বর পোস্টার এঁকেছেন। এ পোস্টারের মূল প্রতিপাদ্য হলো গণমাধ্যমের স্বাধীনতাহীনতা ও চাটুকারিতাকে নিয়ে। রোববার প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, ‘প্রশ্ন নয় প্রশংসা করতে এসেছি’–এই ছিল হাসিনার সংবাদ সম্মেলনের ধরন। এই দমন-পীড়নের মধ‍্যেও যারা ন‍্যূনতম সাংবাদিকতার চেষ্টা করতেন তাদের ওপর নেমে আসত নির্যাতনের খড়্গ। যেসব কারণে জুলাই অনিবার্য হয়ে উঠেছিলো তার মধ‍্যে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়াও ছিলো অন্যতম।

জুলাই ২০২৪ এর অন্যতম যোদ্ধা এই শিল্পী সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে জুলাই ‘পুনর্জাগরণ’অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে এসব পোস্টার ডিজাইন করছেন। এসব পোস্টারে ফুটে উঠবে জুলাই অনিবার্য হয়ে ওঠার কারণ এবং যা ঘটেছিল জুলাইয়ে।

২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের সূচনা ঘটে, যা পরবর্তীতে ‘জুলাই বিপ্লব’ নামে পরিচিত হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু হওয়া এই আন্দোলন দ্রুতই ছাত্র-জনতার একটি ব্যাপক গণজাগরণে পরিণত হয়। আন্দোলনের কেন্দ্রে ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, যারা বিদ্যমান কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবিতে সোচ্চার হয়। সরকারের দমননীতি ও গণহত্যার মুখে এই আন্দোলন সরকারের পতনের মাধ্যমে শেষ হয় এবং এটি জাতির দ্বিতীয় স্বাধীনতার নাম ধারণ করে।

২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো কোটা সংস্কারের দাবি নিয়ে ছাত্রসমাজ আন্দোলনে নামলে তা দেশের রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলে। যদিও সে সময় সরকার কোটা ব্যবস্থা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিল, ২০২৪ সালে হাইকোর্ট তা অবৈধ ঘোষণা করে। এই রায়ের পর দেশের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সংগঠনটি আবারও নেতৃত্ব দেয় এবং সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়।

জুলাই মাসে আন্দোলন ‘বাংলা ব্লকেড’ নামে পরিচিত দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচি গ্রহণ করে। এ সময় আন্দোলন দমাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয় ক্যাডাররা অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করে। রংপুরে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর আন্দোলন আরও তীব্র হয়। দেশজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। সরকার কারফিউ জারি ও ইন্টারনেট বন্ধ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে।

সরকারের দমননীতি ক্রমেই গণহত্যায় রূপ নেয়। পুলিশ ও ছাত্রলীগের যৌথ হামলায় হাজারো মানুষ প্রাণ হারায়, যাদের মধ্যে শিশুরাও ছিল। আন্দোলনের শহীদদের মধ্যে আবু সাঈদ ও মীর মুগ্ধ সবাইকে গভীরভাবে নাড়া দেয়।

দমন-পীড়নের মুখে আন্দোলনকারীরা সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করে। ‘দফা এক, দাবি এক, শেখ হাসিনার পদত্যাগ’ স্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত হয়। ছাত্র ও জনতার অভূতপূর্ব অংশগ্রহণে এ আন্দোলন জাতীয় আন্দোলনে পরিণত হয়।

২০২৪ সালের ৫ আহস্ট ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করার সিদ্ধান্ত আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দেয়। পুলিশের অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ, টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহারের মধ্যেও আন্দোলন থেমে থাকেনি। অবশেষে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ্জামান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের পরামর্শ দেন। শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগে বাধ্য হন।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *