টানা তিনদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে পুলিশের সাথে বিক্ষোভকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ, গ্রেপ্তার, অগ্নিসংযোগ চলছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ট্রাম্প প্রশাসন জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর (ন্যাশনাল গার্ড) সদস্যদের মোতায়েনের নির্দেশ দেওয়ার পর তারা নগরটির দখল নিতে শুরু করেছে।
মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনএনের লাইভ খবরে বলায়, লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ বিভাগ একাধিক বিক্ষোভকে ‘অবৈধ সমাবেশ’ ঘোষণা করে গ্রেপ্তার শুরু করেছে এবং ‘কম প্রাণঘাতী অস্ত্র’ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে।
শুক্রবার ফেডারেল ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ অন্তত ৪৪ জনকে গ্রেপ্তারের পর লস অ্যাঞ্জেলেস জুড়ে প্রতিবাদ শুরু হয়। ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির অংশ হিসেবে দেশজুড়ে ধরপাকড় ও নির্বাসনের ঘটনা ঘটছে।
টানা তিনদিন ধরে সেখানে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও ফ্ল্যাশ গ্রেনেড ব্যবহার করে বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গের চেষ্টা করে। এ নিয়ে দফায় দফায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে দাঙ্গা পুলিশের ব্যপক সংঘাত হয়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা কয়েকটি যানবাহনে অগ্নি সংযোগ করে ও রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে।
সিএনএনের মাঠ পর্যবেক্ষণকারীরা দেখেছেন, অশ্বারোহী পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করছে। কিছু পুলিশ সদস্য বিক্ষোভকারীদের মারধর করছে। তারা ভিড়ের দিকে ফ্ল্যাশ-ব্যাং ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করেন। বিক্ষোভের সময় এ পর্যন্ত দুইটি ওয়েমো গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়।
ক্যালিফোর্নিয়া গভর্নরের দপ্তর জানিয়েছে, সোমবার সকালে লস অ্যাঞ্জেলেসের তিনটি স্থানে প্রায় ৩০০ ন্যাশনাল গার্ড সেনা মোতায়েন রয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বাক্ষরিত এক স্মারকে দু হাজার জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দেওয়া হয়, যা ১৯৬৫ সালের পর প্রথমবার কোনো প্রেসিডেন্ট রাজ্যের অনুমতি ছাড়াই কার্যকর করলেন। পাশাপাশি, ৫০০ মেরিন সেনা প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে নর্থকম।
শুক্রবার গভর্নর গ্যাভিন নিউসোম ট্রাম্পের সঙ্গে প্রায় ৪০ মিনিট কথা বলেন। ট্রাম্প দাবি করেছেন, ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাট নেতৃত্ব ব্যর্থ হওয়ায় তিনি হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়েছেন।
ট্রাম্প বলেছেন, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ব্যর্থ হয়েছে এবং ফেডারেল সরকার ‘দাঙ্গা ও লুটপাটের সঠিক সমাধান দেবে।’ সমাজ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
ট্রাম্প টাইটেল ১০-এর আওতায় জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দেন, যা প্রেসিডেন্টকে সরাসরি নিয়ন্ত্রণের সুযোগ দেয়।
১৯৯২ সালের রডনি কিং দাঙ্গার পর এই প্রথম কোনো প্রেসিডেন্ট এভাবে সেনা মোতায়েন করলেন। তবে সেবার ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নরের অনুরোধে প্রেসিডেন্ট বুশ এই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
আর এবার গভর্নর নিউসোম ওই সিদ্ধান্তকে ‘উসকানিমূলক’ ও ‘জনআস্থা ক্ষয়কারী’ বলে অভিহিত করেছেন।