‘রাজস্ব বোর্ডের বিলুপ্তি কর ব্যবস্থায় বড় সংস্কার’

টাইমস রিপোর্ট
3 Min Read
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সদর দপ্তর। ছবি: ফেসবুক

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভেঙে দুটি নতুন বিভাগ গঠনের সিদ্ধান্তকে কর ব্যবস্থায় বড় ধরনের সংস্কার বলে মনে করছে অন্তর্বর্তী সরকার।

মঙ্গলবার দুপুরে দেওয়া এক বিবৃতিতে সরকারের পক্ষ থেকে এ কথা বলা হয়।

এনবিআর বিলুপ্তির ব্যাখ্যা দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব প্রশাসন বিভাগ–অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে এই দুটি নতুন বিভাগ কর নীতিনির্ধারণ ও বাস্তবায়নের কাজ আলাদা করে দেখবে।

এতে বলা হয়, এই সংস্কারের মূল উদ্দেশ্য হলো কর ব্যবস্থায় দক্ষতা বাড়ানো, স্বার্থসংঘাত কমানো এবং করের আওতা বাড়ানো।

বিবৃতিতে জানানো হয়, ৫০ বছরেরও বেশি পুরোনো এনবিআর ধারাবাহিকভাবে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত মাত্র ৭.৪ শতাংশ, যা এশিয়ায় সর্বনিম্ন। এই অনুপাত ১০ শতাংশে না পৌঁছানো পর্যন্ত উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন।

এতে বলা হয়, এনবিআরের প্রধান সমস্যাগুলো হচ্ছে:

স্বার্থসংঘাত: একই সংস্থা কর নীতি নির্ধারণ ও আদায় করায় জবাবদিহিহীনতা তৈরি হয়েছে। অনেক সময় কর কর্মকর্তারা ব্যক্তিগত স্বার্থে কর ফাঁকিদাতাদের রক্ষা করে থাকেন।

দুর্বল সংগ্রহ ব্যবস্থা: নীতিনির্ধারণ ও বাস্তবায়নের দ্বৈত দায়িত্বে উভয় দিকেই ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

দুর্বল প্রশাসন: বিনিয়োগে উৎসাহ না থাকা, শিথিল আইন প্রয়োগ এবং অব্যবস্থাপনার কারণে ব্যবসা পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সিদ্ধান্ত গ্রহণে জটিলতা: একই ব্যক্তি এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের প্রধান হওয়ায় সিদ্ধান্তগ্রহণে দ্বিধা তৈরি হয়।

বিবৃতিতে জানানো হয়, অন্যদিকে, নতুন কাঠামোতে নীতিনির্ধারণ ও বাস্তবায়ন পৃথক হবে, বিশেষায়ন ও জবাবদিহি বাড়বে, প্রত্যক্ষ কর সংগ্রহে দক্ষতা বাড়বে ও প্রসারিত হবে করজাল, সহজ হবে উন্নয়নমুখী নীতি প্রণয়ন এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে।

এতে বলা হয়, এই পুনর্গঠন শুধুমাত্র প্রশাসনিক পরিবর্তন নয়; এটি একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি স্বচ্ছ, ন্যায়সঙ্গত ও সক্ষম কর ব্যবস্থার দিকে এগোচ্ছে।

এর আগে মঙ্গলবার রাতে এনবিআর বিলুপ্ত ঘোষণা করে অন্তর্বর্তী সরকার। এর পরিবর্তে গঠিত হয় দুটি নতুন বিভাগ—রাজস্ব নীতি বিভাগ এবং রাজস্ব প্রশাসন বিভাগ।

ওই রাতে জারি করা হয়, বহুল আলোচিত ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব প্রশাসন অধ্যাদেশ’। এতে বলা হয়েছে, ‘রাজস্ব নীতি বিভাগ’ কর আইনের বাস্তবায়ন এবং রাজস্ব আহরণের ধারা পর্যবেক্ষণ করবে। অন্যদিকে মূল রাজস্ব সংগ্রহের কাজ পরিচালনা করবে ‘রাজস্ব প্রশাসন বিভাগ’। এই বিভাগে প্রশাসন ক্যাডার এবং আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তারা উভয়েই থাকবেন।

অধ্যাদেশে রাজস্ব নীতি বিভাগের কার্যপরিধিতে কিছু সামান্য পরিবর্তন আনা হয়েছে।

বিসিএস (আয়কর ও কাস্টমস) ক্যাডারের কর্মকর্তাদের আপত্তি উপেক্ষা করেই বাস্তবায়ন করা হয়েছে ওই অধ্যাদেশ।

এনবিআর ভেঙে দুই ভাগ করার সিদ্ধান্তটি দীর্ঘদিন ধরেই কর্মকর্তাদের বিরোধিতার মুখে ছিল।

 

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *