জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে কাজ করা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের (এনসিসি) বৈঠকে সব রাজনৈতিক দল সব বিষয়ে একমত হবে না বলে মন্তব্য করেছেন কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ।
তিনি বলেছেন, ‘যাতে কোনো ভুল বোঝাবুঝি বা বিভ্রান্তি তৈরি না হয়, সে জন্য আমাদের পক্ষ থেকে আন্তরিক চেষ্টা থাকবে। রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য ও প্রত্যাশার সাথে সামঞ্জস্য রাখতে কমিশন কাজ করছে।’
সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার দশম দিনের শুরুতে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা বৈঠকে অংশ নেন।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আলী রীয়াজ। কমিশনের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী, পুলিশ সংস্কার কমিশন প্রধান সফররাজ হোসেন, নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার কমিশন প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন প্রধান বিচারপতি এমদাদুল হক এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান।
রীয়াজ বলেন, ‘দলগুলোর সাথে আলাদাভাবে কথা বলার সময়ও পরিষ্কার করেছি, কমিশন যে প্রস্তাব দিচ্ছে, তাতে সব রাজনৈতিক দল একমত হবে- এমনটি নয়। সব বিষয়েই সবাই একমত হবেন না, সেটি আমরা বুঝি।’
উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘জাতীয় সাংবিধানিক কমিশন (এনসিসি) নিয়ে যে প্রস্তাব ছিল, তাতে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আপত্তি তুলেছিল। তাই আমরা সেখানে সংশোধিত প্রস্তাব এনেছি। নতুন কোনো প্রস্তাব নয়, সংশোধন করা হয়েছে। একইভাবে, বহুত্ববাদ নিয়ে যে আপত্তি এসেছিল, সংশোধিত সংস্করণে তা রাখা হয়নি। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন চারটি প্রদেশ গঠনের প্রস্তাব করেছিল, সেটিও আপাতত আলোচনায় আসেনি, কারণ দলগুলো এতে একমত হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেক বিষয় বাদ দিয়ে এগোতে হচ্ছে, কারণ সব বিষয়ে একমত হওয়া সম্ভব নয়। তবু যেসব বিষয়ে একমত হওয়া যায়, সেখানে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি।’
কমিশনের সহসভাপতি জানান, কিছু বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে, কিছু বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, আবার কিছু বিষয় এখনো আলোচিত হয়নি। তবে প্রাথমিকভাবে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো নিয়ে আরেক দফা বৈঠকের আগে বড় আকারের আলোচনায় যাচ্ছেন না বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘সময়ের সীমাবদ্ধতা আছে। এই সপ্তাহে আরেকদিন বসার সম্ভাবনা আছে। কারণ আগামী সপ্তাহে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের শাহাদাতবার্ষিকীসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক কর্মসূচি আছে। এর মধ্যেও সময় বের করে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে।’
রাজনীতিবিদদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা সাংগঠনিক কাজের পাশাপাশি ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকগুলোকেও অগ্রাধিকার দিন, তাহলে কাজ এগোবে। আলোচনা শেষে আমরা কমিশনে বসে দেখছি, কিভাবে সংশোধিতভাবে প্রস্তাবগুলো চূড়ান্ত করা যায়। আপনাদের অবস্থানকে বিবেচনা করেই তা তৈরি হবে, যাতে বিভ্রান্তি বা ভুল বোঝাবুঝি না থাকে।’