যমুনা রেলসেতুর অন্যরকম উদ্বোধন

admin
By admin
6 Min Read
যমুনা রেল সেতু। ছবি: সংগৃহীত

বড় ধরণের আনুষ্ঠানিকতা নেই, থাকছেন না উপদেষ্টাসহ বিশেষ অতিথি। যমুনা নদীর ওপর নির্মিত দেশের সবচেয়ে বড় রেল সেতুতে মঙ্গলবার যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করবেন মন্ত্রণালয়ের সচিব। আধুনিক সংকেত ব্যবস্থা স্থাপন ছাড়াই তড়িঘড়ি এ উদ্বোধনের কারণ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দিতে পারেননি সংশ্লিস্ট কেউ।

রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অনুষ্ঠানিক উদ্বোধন না হলেও বাণিজ্যিকভাবে যাত্রী পরিবহন শুরু হয়েছে আগেই। গত ১২ জানুয়ারী রাজশাহী থেকে নতুন যমুনা সেতুর একটি লাইন দিয়ে ঢাকা আসে সিল্কসিটি এক্সপ্রেস। তারপর নিয়মিত অন্য ট্রেনগুলো এই পথে যাতায়াত শুরু করে। উদ্বোধনের পর সেতুর দুই লাইনেই ট্রেন চলাচল করবে। এখন নামমাত্র উদ্বোধন হবে। এজন্য বড় কোনো আয়োজন করা হচ্ছে না।

মঙ্গলবার সকাল ১১টা ২০ মিনিটে ইব্রাহিমাবাদ স্টেশন (পূর্বপ্রান্ত) থেকে একটি ট্রেন ছেড়ে যাবে সয়দাবাদ স্টেশনের (পশ্চিম্প্রান্ত) পথে। সেখানে উদ্বোধনী ট্রেন পৌঁছাবে ১১টা ৩৫ মিনিটে। ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করবেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম।

জানতে চাইলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান টাইমস অব বাংলাদেশকে বলেন, সংকেতের কাজ বাকি এটা আমার জানা ছিল না। আমাদের অফিসাররা এমন কিছু জানায়নি। তবে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচলে কোনো সমস্যা হয়নি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আপনি কেন অংশ নিচ্ছেন না – এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, আসলে এটা প্রটোকলের বিষয়। অনুষ্ঠানকে আমরা গুরুত্ব কম দিচ্ছি না। কিন্তু এতে জাইকার প্রেসিডেন্টের আসার কথা ছিল। উনি না আসায় আমি যাচ্ছি না।

যমুনা রেলওয়ে সেতু প্রকল্পের পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান বলেন, আধুনিক সংকেত ব্যবস্থা স্থাপন না হওয়ার কারণে এটা ম্যানুয়ালি চালাতে হবে। এতে বড় ঝুঁকি তৈরি হওয়ার কথা না। তবে হিউম্যান ফেইলর হলে সেটা ভিন্ন কথা।

যমুনা নদীকে কেন্দ্র দেশের রেলওয়ে ব্যবস্থা পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল দুই ভাগে বিভক্ত। সেতুর পূর্বাংশ থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম পর্যন্ত এলাকা পূর্বাঞ্চল। আর সেতুর পশ্চিমাংশ থেকে রাজশাহী, খুলনাসহ ওই অংশকে বলা হয় পশ্চিমাঞ্চল। এই পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলে রেললাইনের ধরনও আলাদা।

পূর্বাঞ্চলের রেললাইনে প্রায় সবই মিটার গেজ ট্রেন চলাচল করে। এই ট্রেনগুলো প্রস্থে তুলনামূলকভাবে ছোট। তাই রেললাইনগুলো সরু থাকে। আর পশ্চিমাঞ্চলের রেললাইনে বেশির ভাগ ব্রডগেজ। রেললাইন তুলনামূলক বড়। যমুনা নদীর ওপর পুরনো সেতুতে বর্তমানে এক লাইনের রেল ট্র্যাক আছে। এই লাইন দিয়ে খুব ধীরে ট্রেন চলতে পারে।
পূর্ব স্টেশন থেকে একটি ট্রেন ছাড়লে পশ্চিম স্টেশনের ট্রেনকে অপক্ষোয় থাকতে হয়। এখন নতুন সেতুতে ডুয়াল গেজ রেল ট্র্যাক হওয়ায় ব্রড গেজ ও মিটার গেজ দুই ধরনের ট্রেনই চলাচল করতে পারবে। রেললাইন থাকছে দুটি। ফলে সেতু পারাপারের জন্য ট্রেনকে অপেক্ষায় থাকতে হবে না।

এক প্রশ্নের জবাবে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান টাইমস অব বাংলাদেশকে বলেন, এতেও বড় সমাধানের নিশ্চয়তা কম। কেন না, দুই অঞ্চলের রেললাইনের ধরণ আলাদা। পূর্বাঞ্চলের মিটার গেজ পশ্চিমাঞ্চলে চলার সুযোগ নেই। ভবিষ্যতে পূর্বাঞ্চলে ব্রড গেজ বাড়ানো পরিকল্পনা করা জরুরি। তবে আশার আলো যমুনায় ট্রেনের গতি কিছুটা বাড়বে।
রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, যমুনা রেল সেতুতে ডুয়াল গেজ এবং ডাবল লাইন রয়েছে। তবে ঈশ্বরদী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত সিঙ্গল লাইন হওয়ায় আপাতত প্রকৃত সুফল পাওয়া যাবে না। এই পথ ডাবল লাইন করা গেলে যমুনা সেতু দেশের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা আমূল বদলে দেবে।

বিদ্যমান যমুনা রেল সেতুতে ট্রেনের গতি খুবই কম। এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পৌছাতে ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট সময় লাগে। তবে নতুন পথে আড়াই মিনিটে ৪.৮০ কিলোমিটার সেতু পাড়ি দিতে পারবে ট্রেন। লাইনে ব্রড গেজ ট্রেন প্রতি ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার এবং মিটার গেজ ট্রেন ১০০ কিলোমিটার গতিতে চলার মতো করে সেতুর নকশা করা হয়েছে। তবে
গড়ে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করছে।

রেলের নথি অনুযায়ী, সেতু দিয়ে এখন ৩৮টি ট্রেন চলাচল করছে। উদ্বোধনের পর ৮৮টি ট্রেন চলার কথা ছিল কিন্তু এখনই সেটি সম্ভব হচ্ছে না। সেতুর দুই লাইন চালু হওয়ার পর দিনে ৫২টি পর্যন্ত ট্রেন চলতে পারবে।

২০২৪ সালের মধ্যে এই সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করার কথা ছিল। তবে ১৬ মাস সময় বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ করা হয়েছে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। চলতি বছরের বাকি সময়টা ট্রেন চলাচলে কোনো ত্রুটি দেখা দেয় কি না, তা পর্যবেক্ষণ করা হবে। সেতুর পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের স্টেশনে আধুনিক সিগন্যালিং ও টেলিকমিউনিকেশনব্যবস্থার উন্নতি করার কাজ এখনো শেষ হয়নি। সংকেত স্থাপনের কাজ শেষ হতে অন্তত আরো তিন মাস সময় লাগবে।

এই প্রকল্পের মধ্য দিয়ে ৪.৮০ কিলোমিটার মূল রেললাইন, দুই পাশে .০৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট (উড়াল সেতু), ৭.৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ সড়ক (সংযোগ বাঁধ), লুপ এবং সাইডিংসহ মোট ৩০.৭৩ কিলোমিটার রেল ট্র্যাক যুক্ত হলো বাংলাদেশ রেলওয়েতে।

৯ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে রেল সেতুটি নির্মাণ করার কথা থাকলেও প্রথম সংশোধনীর পর সেতুর প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৫ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। এর মধ্যে দেশীয় অর্থায়ন ছিল ২৭.৬০ শতাংশ বা চার হাজার ৬৩১ কোটি টাকা। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ঋণ দিয়েছে ১২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা, যা পুরো প্রকল্পের ৭২.৪০ শতাংশ।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *