আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে চলমান আন্দোলন স্থানান্তর হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার রাষ্ট্রীয় বাসভবন যমুনার সামনে বৃহস্পতিবার রাতে যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল শুক্রবার বিকেলে তা শাহবাগ অবরোধে রূপ নিয়েছে। রাজধানীর উত্তরা, রামপুরা ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় অবরোধের প্রস্তুতিও শুরু করেছে তারা। রাতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কেও অবরোধের তথ্য জানা গেছে।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি (ব্লকেড) চলমান থাকবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
শুক্রবার রাত ৮টায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে তিনি এ কথা জানান।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘দ্রুত আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত না এলে সারা বাংলাদেশ আবারও ঢাকা শহরে মার্চ করবে। দলমত নির্বিশেষে আওয়ামী লীগ ও দেশের সার্বভৌমত্ব প্রশ্নে জুলাইয়ের সব শক্তি এক থাকবে; এটাই প্রত্যাশা। ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে ব্লকেড শুরু হয়েছে।’
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বৃহস্পতিবার রাতে আকস্মিক এক ঘোষণা দিয়ে যমুনার সামনে বিক্ষোভ শুরু করে। শুক্রবার তারা বাদ জুমা মিন্টো রোডে সমাবেশ করে এবং অবস্থান অব্যাহত রাখে। এরপর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মিন্টো রোড থেকে মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীরা শাহবাগ মোড়ে গিয়ে বসে পড়ে। রাত পর্যন্ত শাহবাগ মোড় অবরোধ করে তারা বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকে।

এর আগে বিকেলের দিকে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ এক ফেসবুক পোস্টে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধের ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, ‘ইন্টেরিমের (অন্তর্বর্তী সরকারের) কানে আমাদের দাবি পৌঁছায়নি। তাই আমরা সমাবেশস্থল থেকে শাহবাগ অবরোধে যাচ্ছি। দাবি না আদায় পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করব। আওয়ামী লীগ কোনোভাবে রাজনৈতিক দল নয়। ১৯৭৪ সালে আওয়ামী লীগ বাকশাল তৈরি করে এ দেশে গণতন্ত্রের পরিবর্তে মাফিয়াতন্ত্র কায়েম করেছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের লুটপাটের কারণে দুর্ভিক্ষে ১৫ লাখ মানুষ না খেয়ে মারা গিয়েছিল। আওয়ামী লীগের হাতে এ দেশের মানুষের রক্ত লেগে আছে। আওয়ামী লীগ ভারতের সহায়তায় দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করেছিল।’
দুপুরে এনসিপি নেতা আশরাফ মাহাদীর কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে সমাবেশ শুরু হয়। অত্যাধিক গরমের কারণে সমাবেশ শুরু হওয়ার পর সেখানে পরিবেশ ঠান্ডা রাখতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) স্প্রে ক্যানন পানি ছিটানো শুরু করে।

এনসিপির এ সমাবেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং সাধারণ ছাত্র-জনতাকে প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন হাতে অংশ নিতে দেখা যায়।
এদিকে যমুনার সামনে জুলাই আন্দোলনের আহতরা অবস্থান করছিলেন। তাদের দাবি সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা। এজন্য তারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ চান। সেখানে উপস্থিত ১৫-১৬ জন আহতকে পুলিশ প্রথমে বুঝিয়ে সরাতে ব্যর্থ হয়। পরে এনসিপি নেতাদের অনুরোধে তারা শাহবাগে যান।
শাহবাগের পাশাপাশি আন্দোলনকারীরা রাজধানীর উত্তরা আজমপুরে অবরোধ করেছে। আগামীকাল তারা যাত্রাবাড়ীসহ রাজধানীর সব প্রবেশপথ অবরোধ করবে বলে জানা গেছে।
শুক্রবার রাতে রামপুরা এলাকায় বিক্ষোভে নামেন আন্দোলনকারীরা। সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাকিজা শাড়ি ফ্যাক্টরির সামনে অবরোধ গড়ে তুলেছেন আন্দোলনকারীদের একাংশ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা।