জুলাই আন্দোলনে চালানো ‘গণহত্যার বিচার’ ও ‘মুজিববাদী সংবিধানের’ সংস্কারের আগে দেশে কোনো নির্বাচন চায় না জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
বুধবার সন্ধ্যায় ঝিনাইদহের পায়রা চত্ত্বরে এক সমাবেশে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা এ কথা বলেন।
‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার বিকালে এনসিপির নেতারা চুয়াডাঙ্গা থেকে ঝিনাইদহ জেলা শহরের জোহান পার্কে পৌঁছান। সেখানে তারা শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর ৬টার দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড চত্বর থেকে পদযাত্রা শুরু করেন।
সন্ধ্যায় পায়রা চত্ত্বরে এক সমাবেশে বক্তব্য দেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মূখ্য সংগঠক সার্জিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, মূখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, যুগ্ম সদস্য সচিব তারেক রেজা প্রমুখ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনে চালানো গণহত্যার বিচার ও মুজিববাদী সংবিধানের সংস্কারের আগে কোনো নির্বাচন চায় না এনসিপি। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা জুলাই হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন, যার প্রমাণ বিবিসি পেয়েছে। ফলে খুনি শেখ হাসিনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত কোনো নির্বাচন হবে না। আমরা কোটা সংস্কারের জন্য মাঠে নেমেছিলাম, যার পথ ধরে সরকারের পতন হয়েছে। সংবিধানসহ সকল সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই চলবে।’
‘মানুষ চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে, জুলুমবাজদের বিরুদ্ধে, দখলদারদের বিরুদ্ধে এক হয়েছে, তাদের আর পরাস্ত করা সম্ভব নয়। হাসিনার শাসন ব্যবস্থা থাকবে, আর নতুন কেউ এসে শাসন করবে- এই জন্য চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান হয়নি। জুলাই আন্দোলনের চেতনায় দেশ গড়তে হবে।’

সমাবেশে নাহিদ ইসলাম সীমান্ত হত্যা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘ভারত সরকারকে বাংলাদেশের মানুষের প্রতি মর্যাদাশীল আচরণ করতে হবে। গত ২৫ বছরে সীমান্তে বিএসএফ ১ হাজার ২০০ মানুষকে হত্যা করেছে, তারা সীমান্তরক্ষী নয় একটি খুনি বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। বিএসএফ মানবতাবিরোধী বাহিনী। আমরা সীমান্ত হত্যা মেনে নেব না।’
সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘হাসিনার শাসনব্যবস্থা থেকে আমরা মুক্ত হয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত গণবিরোধী শাসনব্যবস্থা থেকে আমরা মুক্ত হতে পারিনি। বাংলাদেশে যতগুলো প্রতিষ্ঠান আছে সেগুলো নতুন করে গড়ার লড়াই শুরু হয়েছে।’

হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘বিবিসির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, হাসিনা নির্দেশ দিয়েছিল পাখির মতো গুলি করে আন্দোলনকারীদের বুক ঝাঁজরা করে দিতে। আওয়ামী লীগের চ্যাপ্টার এখন ক্লোজ, আওয়ামী লীগ আর কখনো ফিরে আসবে না।’
‘ভারত হচ্ছে আমাদের শঙ্কার জায়গা। মধ্য এশিয়ায় অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করছে ভারত। ভারত বর্তমানে সন্ত্রাসীদের অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘একটি পক্ষ গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে বাধা হয়ে দাড়িয়েছে, তারা নির্বাচন পেছানোর জন্য পাঁয়তারা করছে। তারা নির্বাচন চাইলে গণহত্যার বিচার ও সংস্কার দুটোই কার্যকর করতো। সংস্কার দ্রুত না হলে ছাত্ররা আবার রাস্তায় নেমে আসবে।’
‘একটি দল বলছে সংস্কার ও বিচার নির্বাচিত হয়ে এসে তারা করবে, এমন ধোঁকাবাজি অনেক হয়েছে।’
নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, ‘ইউনূস সরকারকে আমরা এক বছর সময় দিয়েছি, তারা গণহত্যার বিচার নিয়ে গড়িমসি করছে। আইন উপদেষ্টা মুখে বড় বড় কথা বলেছেন, কিন্তু হাসিনার বিচারের কথা উঠলেই তিনি গড়িমসি করছেন।’
সমাবেশে জুলাই আন্দোলনে শহীদ রাকিব হোসেনের মা ও বাবা বক্তব্য দেন।
পদযাত্রায় এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, সামন্তা শারমিনসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এতে আরও অংশ নেন ঝিনাইদহ পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর কাউসার আরেফিন, ৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর লাড্ডু জোয়ার্দার, জেলা বৈষম্যবিরোদী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক আবু হুরাইরা, সদস্য সচিব সাইদুর রহমান, সদর উপজেলা আহ্বায়ক সৌরভ আহম্মেদ শুভ, মহেশপুর উপজেলা আহ্য়্ক হামিদুর রহমান রানা, কোটচাঁদপুর উপজেলা আহ্বায়ক হৃদয় প্রমুখ।