মারা গেছেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক

টাইমস রিপোর্ট
3 Min Read
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। ছবি: সংগৃহীত
Highlights
  • বহুল আলোচিত আব্দুর রাজ্জাক যুক্তরাজ্যে থাকা অবস্থায় ২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াতে ইসলামী থেকে পদত্যাগ করেন। তিনি দেশে থাকা অবস্থায় জামায়াতে সংস্কারের তাগিদ দিয়েছিলেন। বিশেষত ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন ভূমিকার জন্য দলটিকে ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন ব্যারিস্টার রাজ্জাক।

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নেতা ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক মারা গেছেন।

রাজধানীর একটি হাসপাতালে রোববার বিকেল সাড়ে ৪টায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার জুনিয়র অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির এ তথ‍্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি আরও জানান, ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের জানাজা পারিবারিক সিদ্ধান্তক্রমে রোববার বাদ এশা ধানমন্ডির তাকওয়া মসজিদে এবং সোমবার বেলা ১১ টায় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে।

তার মৃত্যুতে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন।

গুরুতর অসুস্থতা নিয়ে প্রায় দু সপ্তাহ ধরে রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। সর্বশেষ তিনি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।

ব্যারিস্টার রাজ্জাক জামায়াতের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন। দলটির আইনি এবং আন্তর্জাতিক বিষয় দেখভাল করতেন তিনি। ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর তিনি দেশ ছেড়ে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। এর আগে তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের আইনজীবী ছিলেন।

বহুল আলোচিত আব্দুর রাজ্জাক যুক্তরাজ্যে থাকা অবস্থায় ২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াতে ইসলামী থেকে পদত্যাগ করেন। তিনি দেশে থাকা অবস্থায় জামায়াতে সংস্কারের তাগিদ দিয়েছিলেন। বিশেষত ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন ভূমিকার জন্য দলটিকে ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন ব্যারিস্টার রাজ্জাক।

এরপর ২০২০ সালের ২ মে আত্মপ্রকাশ করা নতুন রাজনৈতিক দল আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির প্রধান উপদেষ্টা হন। যদিও এ তথ্য এক বছর গোপন রাখা হয়। বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর

গতবছর ১৭ আগস্ট সেই পদ থেকেও পদত্যাগ করেন তিনি। এবি পার্টির সঙ্গে কিছু ক্ষেত্রে মতপার্থক্য তৈরি হওয়ার কথা জানিয়ে তিনি এক হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় পদত্যাগ করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

দীর্ঘ ১১ বছর পর ২০২৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফেরেন ব‍্যারিস্টার রাজ্জাক। দেশে ফিরে আবারও সক্রিয়ভাবে আইন পেশায় যুক্ত হন। গত ৬ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমি একজন কোর্ট রুম ব্যারিস্টার। আমি আইন পেশায় থেকেই দেশের জন্য কাজ করতে চাই। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারলে রাজনীতি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন দুটোই সম্ভব হবে।’

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মৃত্যুকালে ব্যারিস্টার রাজ্জাক স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার দুই ছেলেও ব্যারিস্টার হিসেবে সুপ্রিম কোর্টে আইন পেশায় নিয়োজিত।

আব্দুর রাজ্জাকের জন্ম ১৯৪৪ সালে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার মাথিউরা ইউনিয়নের শেখলাল গ্রামে। শিক্ষাজীবনে ১৯৮০ সালে তিনি যুক্তরাজ্যের লিংকনস ইন থেকে ব্যারিস্টার ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি লন্ডনেই আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন ১৯৮৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত। এরপর আব্দুর রাজ্জাক দেশে ফিরে আসেন এবং ১৯৮৬ সালে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভূক্ত হন।

১৯৮৮ সালে হাইকোর্ট বিভাগে এবং ১৯৯৪ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। ২০০২ সালে আপিল বিভাগে সিনিয়র অ্যাডভোকেট হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন তিনি। এর আগেই ১৯৯০ সালে তিনি দ্য ল’ কাউন্সেল নামে একটি আইনি ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেন।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *