যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) অভিযোগ করেছে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ভারত সরকার শত শত বাংলা ভাষাভাষী মুসলিমকে বেআইনিভাবে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে। সংগঠনটি বলেছে, ভারতীয় নাগরিকদেরও ‘অবৈধ অভিবাসী’ আখ্যা দিয়ে সীমান্ত পার করানো হয়েছে।
সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে ‘পুশ ইন’ অনেকেই ভারতের সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোর বাসিন্দা। আসাম, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, গুজরাট, ওড়িশা ও রাজস্থান রাজ্যে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। সীমান্তে পৌঁছানোদের মধ্যে বহু ভারতীয় নাগরিকও রয়েছেন, যাদের জোর করে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে।
এইচআরডব্লিউ বলছে, এ ধরনের বেআইনি বিতাড়ন অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত এবং সবার জন্য আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করা প্রয়োজন; যাতে কেউ বেআইনি আটক বা জবরদস্তিমূলক বিতাড়নের শিকার না হন।
সংস্থাটির এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ইলেইন পিয়ারসন বলেন, ‘ভারতের শাসক দল বিজেপি নির্বিচারে জাতিগত বাঙালি মুসলিমদের, এমনকি ভারতীয় নাগরিকদেরও, দেশ থেকে তাড়িয়ে বৈষম্যমূলক মনোভাব উসকে দিচ্ছে। সরকার দাবি করছে তারা অনিয়মিত অভিবাসন মোকাবিলা করছে; কিন্তু যথাযথ প্রক্রিয়ার প্রতি অবজ্ঞা এবং দেশীয় আইন ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড উপেক্ষা তাদের দাবিকে বিশ্বাসযোগ্য করে না।’
গত জুনে এইচআরডব্লিউ ৯টি পরিবারের ভুক্তভোগীসহ ১৮ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। তাদের অনেকে বাংলাদেশে বিতাড়িত হওয়ার পর পুনরায় ভারতে ফিরে গেছেন, আবার অনেকে গ্রেফতার হয়ে এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। এ বিষয়ে ৮ জুলাই ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
ঢাকার প্রতিবাদ
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নয়াদিল্লির কাছে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ভারতের এ ধরনের বিতাড়ন বেআইনি ও অগ্রহণযোগ্য।’ বাংলাদেশ ভারতকে এ ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করতে এবং সীমান্ত পেরোনোর আগে আলোচনা করার প্রচলিত পদ্ধতিতে ফিরে যেতে আহ্বান জানিয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা টাইমস অব বাংলাদেশকে বলেছেন, ‘আমরা ভারতকে স্পষ্ট প্রমাণ দিতে বলেছি যে এরা সত্যিই বাংলাদেশি কিনা। অনেকেরই বাংলাদেশি নাগরিক হওয়ার প্রমাণ নেই।’
ভারতের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। ফলে ঢাকা একাধিক দ্বিপাক্ষিক চ্যানেলে বিষয়টি তুলেছে।
আঞ্চলিক প্রভাব
বিশ্লেষক ও অধিকারকর্মীরা বলছেন, ভারতে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান মুসলিম সম্প্রদায়কে লক্ষ্যবস্তু করছে। বিশেষ করে আসামে বিতর্কিত জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) অনেক মানুষকে আইনি সুরক্ষার বাইরে রেখেছে।
এইচআরডব্লিউ সতর্ক করেছে, এ ধরনের ব্যাপক বিতাড়ন সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বাড়াতে পারে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) জানিয়েছে, ছয় সপ্তাহে ভারত থেকে ১,৫০০ জনের বেশি মানুষকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে, যাদের মধ্যে প্রায় ১০০ রোহিঙ্গা শরণার্থীও আছেন।