ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি শফিউর রহমান ফারাবী জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। শুক্রবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে তিনি গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের হন।
কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত শফিউর রহমান ফারাবী ২০২৩ সাল থেকে এ কারাগারে বন্দি ছিলেন। আদালত থেকে বৃহস্পতিবার বিকালে তার জামিনের কাগজপত্র কারাগারে এসে পৌঁছে। পরে তা যাচাই-বাছাই করা হয়। পরে জামিনের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে তাকে শুক্রবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে মুক্তি দেওয়া হয়।’
এর আগে গত ৩১ জুলাই হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ ফারাবীর জামিন মঞ্জুর করে।
আদালতে ফারাবীর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস. এম. শাহজাহান ও মুহাম্মাদ হুজ্জাতুল ইসলাম খান। তারা আদালতকে জানান, মামলার চার আসামির স্বীকারোক্তিতে ফারাবীর নাম নেই, কোনো প্রত্যক্ষ সাক্ষীও তার কথা উল্লেখ করেননি এবং তিনি নিজেও কোনো স্বীকারোক্তি দেননি।
শুনানি শেষে ফারাবীর দীর্ঘ সময় ধরে কারাগারে থাকার বিষয়সহ অন্যান্য বিষয় বিবেচনায় নিয়ে জামিন মঞ্জুর করে আদালত।
এরপর চেম্বার আদালত রাষ্ট্রপক্ষের জামিন স্থগিতের আবেদনের শুনানিতে ‘নো অর্ডার’ দেয়। ফলে হাইকোর্টের আগের জামিন আদেশ বহাল থাকে।
২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণ থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে আহত করে দুর্বত্তরা। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। হামলায় তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাও গুরুতর আহত হন।
এ ঘটনায় অভিজিতের বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক অজয় রায় শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা করেন।
অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ২০১৫ সালের ২ মার্চ ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে ফারাবীকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এরপর থেকে তিনি কারাগারেই ছিলেন।
২০১৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। একই বছরের ৬ আগস্ট আদালত অভিযোগ গঠন করে। ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান রায় দেন। রায়ে পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ড এবং শফিউর রহমান ফারাবীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।
ফারাবী সেই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেছিলেন। জামিন মঞ্জুর হওয়ার পর আজ তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন।
শফিউর রহমান ফারাবী নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীর সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৫ সালের আগেও তিনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, পরে জামিনে মুক্তি পান।
অভিজিৎ রায় নিহত হওয়ার আগে তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে একটি বক্তব্য ফারাবীর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে শেয়ার করা হয়েছিল। বাংলা বই বিক্রির ওয়েবসাইট ‘রকমারি ডটকম’ থেকে অভিজিতের বই সরাতেও হুমকি দিয়েছিলেন তিনি।