২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে বৈষম্য হ্রাস ও সম্পদ পুনর্বণ্টনের লক্ষ্যে অপ্রতুল বলে মনে করছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। বৈষম্য কমাতে ব্যর্থ এ বাজেট পরোক্ষ করের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল, যা গরিব মানুষের ওপর করের চাপ বাড়াবে বলে মন্তব্য করেছেন সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান।
রোববার সকালে রাজধানীর গুলশানের হোটেল লেকশোরে ‘সিপিডি বাজেট ডায়ালগ ২০২৫’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এ অভিমত দেন।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এই বাজেট অর্থনৈতিক প্রয়োজনের তুলনায় একেবারে অপ্রতুল। পরোক্ষ করের ওপর নির্ভরশীল এ বাজেট মূলদর্শনের সঙ্গে সাংর্ঘষিক। বাজেটের লক্ষ্য সম্পদ পূর্ণবন্টন, অর্থাৎ ধনীদের কাছে থেকে কর নিয়ে গরীবদের দেয়া হবে। কিন্তু পরোক্ষ কর বাড়লে দরিদ্রদের ওপর করের বোঝা চাপে।’
‘বাজেটের মূল বিষয় হচ্ছে রাজস্ব আয়। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে প্রত্যক্ষ আয় বেশি, পরোক্ষ আয় কম। কিন্তু আমাদের দেশে উল্টো। জুলাই-আগস্টের পর আমাদের বড় আকাঙ্খা ছিল- এবারে ব্যতিক্রমী বাজেট হবে, আমরা দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো। কিন্তু তা হয়নি।’

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন তার উত্থাপিত প্রবন্ধে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সমালোচনা করে বলেন, ‘প্রতিবছর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারে না। কেন সেটা পারে না? কারণ সেখানে কোনো কাঠামোগত বা প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার হয়নি।’
‘সংস্কার ছাড়া এ ধরনের কাঠামো জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে রেখে দিলে এমন ঘাটতি চলতেই থাকবে।’
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘বাজেটে বড় কোনো সিদ্ধান্তের জন্য রাজনৈতিক উদ্যোগ জরুরি। বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদে চারজন অর্থনীতিবিদ রয়েছেন। তারপরও কেন গতানুগতিক বাজেট হলো। আমি মনে করি উপদেষ্টা পরিষদের সবাই অর্থনীতিবিদ হলেও ব্যতিক্রম কিছু হতো না। কারণ বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে যে সাহস দেখাতে হয়, সেটির জন্য রাজনৈতিক উদ্যোগ প্রয়োজন।’
বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, ‘বাজেট সরকারের চরিত্র উন্মোচন করে। বাজেটেই বোঝা যায় সরকার কি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র চায় নাকি লুটেরাতন্ত্র বহাল রাখতে চায়।’
‘কল্যানমুখী খাতগুলোয় উদাহরণ সৃষ্টির সুযোগ থাকলেও সরকার তা করতে পারেনি। এ সরকার গতানুগতিক বাজেট থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। যা অত্যন্ত দু:খজনক।’
এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদে চারজন অর্থনীতিবিদ থাকার পরও ত্রুটিপূর্ণ খসড়া বাজেট আমরা পেয়েছি। বাজেটের ব্যাপারে স্টেকহোল্ডারদের আলোচনা হয়নি, যা জরুরি ছিল।’
আলোচনায় এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. মাশরুর রিয়াজ, বিজিএমইএ এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইনামুল হক খান, ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালা, শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন প্রমূখ।