আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে আসা হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন ও পার্সি সম্প্রদায়ের মানুষ যারা ধর্মীয় সহিংসতার শিকার হয়ে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বৈধ পাসপোর্ট বা ভ্রমণ নথি নিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছেন অথবা যাদের নথির মেয়াদ শেষ হয়েছে; তারা দেশটিতে বাস করতে পারবেন।
ভারতের নতুন ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ফরেনার্স অ্যাক্ট, ২০২৫ অনুযায়ী এই ব্যক্তিরা শাস্তি থেকে অব্যাহতি পাবেন। সোমবার আইনটি কার্যকর হয়েছে।
বুধবার দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাতে টাইমস অব ইন্ডিয়া এ তথ্য জানিয়েছে। গত বছর কার্যকর হওয়া দেশটির নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী এসব ব্যক্তি ভারতের নাগরিকত্বও পাবেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুসারে, নেপাল ও ভুটানের নাগরিক এবং ১৯৫৯ থেকে ২০০৩ সালের ৩০ মে পর্যন্ত বিশেষ প্রবেশ অনুমতিপত্র নিয়ে ভারত প্রবেশ করা ও নিবন্ধিত তিব্বতিদেরও একই ছাড় দেওয়া হয়েছে। তবে নেপাল ও ভুটানের নাগরিকরা যদি চীন, ম্যাকাও, হংকং বা পাকিস্তানের মাধ্যমে প্রবেশ বা প্রস্থান করেন, তাহলে এ সুবিধা পাবেন না।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, ধর্মীয় সহিংসতার কারণে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের হিন্দু, খ্রিষ্টান, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ ও পার্সি নাগরিকদের যারা ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ভারতে গেছেন, বৈধ নথি না থাকলেও তারা ভারতে বসবাস করতে পারবেন। তাদের শরণার্থীর মর্যাদা দেওয়া হবে। কাউকে আটক করা হবে না, তাড়িয়েও দেওয়া হবে না।
গত এপ্রিলে পাস হওয়া আইনের ২১ ধারা অনুযায়ী, বৈধ পাসপোর্ট বা ভিসা ছাড়া প্রবেশ করলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা হতে পারে। ২৩ ধারা অনুযায়ী, ভিসার মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে অবস্থান করলে সর্বোচ্চ তিন বছর কারাদণ্ড বা ৩ লাখ টাকা জরিমানা হবে। তবে ২০১৫ সালের ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত ভারতে আশ্রয় নেওয়া নিবন্ধিত শ্রীলঙ্কান তামিল, তিন বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালনে পরিবারসহ প্রবেশ বা প্রস্থান করলে এবং কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীরা এ বিধান থেকে অব্যাহতি পাবেন।
আইন বাস্তবায়নের ক্ষমতা রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোকে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে জরিমানার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসা ছাড়া প্রবেশ করলে ৫ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে। ভিসার মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থায় ধাপে ধাপে জরিমানা হবে ৩০ দিন পর্যন্ত ১০ হাজার, ৩১ থেকে ৯০ দিনের জন্য ২০ হাজার, ৯১ থেকে ১৮০ দিনের জন্য ৫০ হাজার, ১৮১ দিন থেকে এক বছরের বেশি পর্যন্ত ১ লাখ এবং এক বছরের বেশি অবস্থান করলে প্রতি বছর অতিরিক্ত ৫০ হাজারসহ সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা। তবে তিব্বতি, মঙ্গোলিয়ার বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান থেকে দীর্ঘমেয়াদি ভিসার যোগ্য অভিবাসীদের জরিমানা ৫০ থেকে ৫৫০ টাকার মধ্যে সীমিত থাকবে।
বিদেশি যদি ভারতে সংরক্ষিত বা সীমিত এলাকায় প্রবেশ করেন, তাহলে একই জরিমানা প্রযোজ্য হবে। বিদেশি নাগরিকদের আবাসনের তথ্য গোপন করলে ১ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা হাসপাতাল বিদেশি শিক্ষার্থী বা রোগীর তথ্য গোপন করলে জরিমানা হবে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত। তবে জাহাজ বা উড়োজাহাজ যাত্রী বহনের সময় নথি জাল প্রমাণিত হলেও বিশেষজ্ঞের সাহায্য ছাড়া শনাক্ত করা সম্ভব না হলে প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করা হবে না।