দেশজুড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। বর্ষা মৌসুমে অব্যাহত বৃষ্টিপাতের জেরে এডিসের প্রজনন বাড়ছে। ফলে কিছুতেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঢাকার দক্ষিণে সিটি করপোরেশন এলাকায় এডিস মশার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ২৬ হাজার ৭৫৮ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন, এর মধ্যে ২৩ শতাংশই ঢাকার। যাদের মধ্যে বেশির ভাগই দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা।
আগস্টের প্রথম ১২ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন চার হাজারের বেশি রোগী। মৃত্যু হয়েছে ২০ জনের।
পরবর্তী দুই মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যেহেতু ডেঙ্গুর ধরন বদলেছে, তাই শীতেও ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকতে পারে। গত কয়েক বছর শীতেও ছিল ডেঙ্গুর প্রকোপ।
সায়েন্স ট্রান্সলেশনাল মেডিসিন সাময়িকীতে প্রকাশিত এক নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে, ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনেরও সরাসরি সম্পর্ক পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। মূলত আমেরিকা মহাদেশে ‘এল নিনো’ আবহাওয়া ঘটনার প্রায় পাঁচ মাস পর ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।
এছাড়া কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, ডেঙ্গুর পাশাপাশি মশাবাহিত আরেক রোগ চিকুনগুনিয়াও বাড়ছে।
বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পরিমাণ বেশি থাকায় মশার বংশবিস্তার বাড়ে। তাই এ সময় নগরবাসীকে অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বনের পাশাপাশি মৃত্যুঝুঁকি কমাতে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠদের বিশেষ যত্ন নেওয়া পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। একইসঙ্গে জ্বর হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে ডেঙ্গু পরীক্ষা করার কথা বলছেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা।
কেননা সাধারণত জ্বর কমে যাওয়ার পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যে ডেঙ্গুর জটিলতা দেখা দিতে পারে, তাই এই সময়টায় অধিক সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
কীটতত্ত্ববিদদের মতে, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতার বিকল্প নেই। এডিসের লার্ভা ধ্বংসে জনগণের সম্পৃক্ততা ও সচেতনতা খুবই জরুরি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, ‘মানুষের সম্পৃক্ততা ছাড়া শুধু সরকার একা এডিস মশা বা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। এজন্য আমাদের সম্মিলিত প্রয়াস দরকার।’