বীর মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগম আর নেই। মঙ্গলবার ভোর পাঁচটার দিকে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার হিলচিয়া ইউনিয়নের বড়মাইপাড়া গ্রামে তার ভাগ্নির বাড়িতে বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ সাহসিকতা দেখানো এই নারী বীরের বয়স হয়েছিল প্রায় ৮০ বছর।
সখিনা বেগম কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার গুরুই ইউনিয়নের গরুরাই গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। তার বাবা সোনাফর মিয়া ও মা দুঃখী বিবি। মুক্তিযুদ্ধের আগেই তার স্বামী কিতাব আলী মারা যান। কোনো সন্তান ছিল না। জীবনের শেষ দিনগুলো তিনি ভাগ্নি ফাইরুন্নেছা আক্তারের কাছে কাটিয়েছেন।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সখিনা বেগম সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। বসু বাহিনীর ক্যাম্পে তিনি রান্নাবান্নার কাজ করতেন, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য খাবার প্রস্তুত করতেন। তবে এখানেই সীমাবদ্ধ ছিল না তার অবদান। শত্রু পক্ষের গতিবিধি নজরে রেখে গোপনে তথ্য সংগ্রহ করে তিনি তা মুক্তিযোদ্ধাদের জানাতেন।
এক পর্যায়ে তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। সেখান থেকে সাহসিকতার সঙ্গে পালিয়ে এসে প্রতিশোধে নামেন। জনশ্রুতি অনুযায়ী, দা দিয়ে তিনি পাঁচজন রাজাকারকে কুপিয়ে হত্যা করেন। তার ব্যবহৃত সেই দা এবং মুক্তিযুদ্ধে তার অবদানের ইতিহাস সংরক্ষিত আছে ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে।
বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার স্বীকৃতি হিসেবে সরকার তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে “বীর মুক্তিযোদ্ধা” খেতাবে ভূষিত করে। সেই বীর নারীর জীবন শেষ হয়েছে নিঃসঙ্গতা ও উপেক্ষায়।
নিকলীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের কথা জানিয়েছেন।