বিষমুক্ত ‘প্রাণ বৈচিত্র খামারে’ কৃষি বিপ্লবের স্বপ্ন

টাইমস ন্যাশনাল
3 Min Read
মানিকগঞ্জে বিষমুক্ত কৃষি খামার। ছবি: ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

মানিকগঞ্জের ঘিওরের কৃষি উদ্যোক্তা দেলোয়ার জাহান রাসায়নিক সার ও কীননাশকের বিষমুক্ত কৃষিতে নতুন বিপ্লবের স্বপ্ন বুনেছেন। সাংবাদিকতা ছেড়ে চাষাবাদকে আয়ের উৎস বানিয়ে তিনি শুধু নিজের জীবনের গতিপথই পালটে ফেলেন নি, বরং কৃষিক্ষেত্রে এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করে দেশীয় খামারিদের এই কাজে সফলতার রাস্তা দেখিয়েছেন।

২০০৭ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের পর ২০১১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত কৃষি বিষয়ক সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত ছিলেন দেলোয়ার জাহান। সর্বশেষ দৈনিক সকালের খবর পত্রিকায় কর্মরত অবস্থায় তিনি এ পেশা ছেড়ে ২০১৮ থেকেই বিষমুক্ত প্রাকৃতিক চাষবাসে মন দেন।

এখন তিনি ঘিওরের বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের কাউটিয়া গ্রামে বসবাস করে এবং নিজস্ব ও বর্গা নেওয়া প্রায় ১২ বিঘা জমির ওপর পরিচালনা করছেন নিজের প্রতিষ্ঠিত ‘প্রাণ বৈচিত্র খামার’।

মানিকগঞ্জে বিষমুক্ত কৃষি খামার। ছবি: ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

কৃষি বৈচিত্র্য ও সম্পদের এক অনন্য ভাণ্ডার এই খামারে শতাধিক প্রজাতির ঔষধি ও ভেষজ উদ্ভিদ সংরক্ষিত রয়েছে। সেখানে রয়েছে মিষ্টি লাউ, পানি লাউ, চাল কুমড়া, ঢেঁড়স, পুঁইশাক, মিষ্টি আলু, মাইটা আলু, লাঠি আলু, লতা আলু, চিচিঙ্গা, ধুন্দল, কহি, বেগুন, শসা, টমেটো, মরিচসহ প্রায় ৭০ প্রজাতির সবজির বীজ। এছাড়া হিজুল দিঘা, বাউলা, বরুণ, বগাদিঘা, লক্ষী দিঘা, রাজভোগ, অহনা, রাজপুত্র, আমসাইল, কালা মানিক, আউশ ও আমনসহ বহু দুর্লভ প্রায় ২৮ প্রজাতির দেশীয় ধানের বীজও আছে।

এ খামারে ১০ প্রজাতির দেশীয় গরুসহ হাঁস, মুরগি ও ছাগল পালনের পাশাপাশি দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছের চাষও হয়।

সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে সৌর বিদ্যুৎ দিয়েই চলে খামারের সব কাজ। রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার না হওয়ায় এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় থাকায় এই খামারটি এখন হয়ে উঠেছে দেশি ও অতিথি পাখির অভয়াশ্রম। খামার থেকে পেঁচা, ঘুঘু, চিলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখির খাবারও সরবরাহ করা হয়।

মানিকগঞ্জে বিষমুক্ত কৃষি খামার। ছবি: ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

কৃষির টেকসই উন্নয়ন ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের লক্ষ্যে দেলোয়ার জাহান নিয়মিতভাবে কৃষকদের মধ্যে ‘বীজ বিনিময় উৎসব’ আয়োজন করেন। খামারে নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হয় কৃষকদের নিয়ে কর্মশালা, যেখানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী, সবাই কৃষক। এভাবে তৈরি হয়েছে গ্রামীণ কৃষির এক নতুন জ্ঞানভিত্তিক মডেল।

এই খামার শুধু কৃষিজ উৎপাদনের ক্ষেত্রেই নয়, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও অবদান রাখছে। বর্তমানে প্রায় ২০ জন স্থানীয় মানুষ এই খামারে কর্মরত।

দেলোয়ার জাহান বলেন, ‘আমাদের কৃষি ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বিশুদ্ধ বীজের অভাব। তাই আমরা শুরু থেকেই বিষমুক্ত ও দেশীয় বীজ সংরক্ষণে গুরুত্ব দিয়েছি। কৃষক যদি নিরাপদ বীজের ওপর নির্ভরশীল হতে পারে, তবে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা অনেক সহজ হবে।’

আগামী প্রজন্মের জন্য বিশুদ্ধ বীজের ভাণ্ডার তৈরি করা তাদের লক্ষ্য বলেও জানান তিনি।  দেলোয়ারের আক্ষেপ, ক্যাটাগরির মধ্যে না পড়ায় সরকারি কোনো সহযোগিতা তারা এখনও পাননি।

কিছুদিন আগে নিয়োগপ্রাপ্ত  ঘিওর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তহমিনা খাতুন দেলোয়ার জাহানের চাষাবাস সম্পর্কে মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *