জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম সমালোচনার মুখে পড়েছেন চলনে-বলনে। সম্প্রতি তার হেলিকপ্টার-বিমান ভ্রমণ, শতাধিক গাড়ির বহর নিয়ে নিজ এলাকায় শো-ডাউনসহ বিভিন্ন ঘটনা আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কিছুদিন আগে তিনি ‘হাতে টাকা নেই, ধার করে চলছি’- জাতীয় কথা বলতেন ঘনিষ্ঠদের কাছে, সেই প্রিয়জনরা এখন বিস্মিত তার আকস্মিক উত্থানে। অন্য রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি এনসিপির নেতারাও কথা বলছেন সার্জিসের আয়-ব্যয় প্রশ্নে।
সেনাবাহিনী নিয়ে পার্টির আরেক মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহর ফেসবুক পোস্টের পাল্টা বয়ান দিয়ে দুদিন আগেই বেশ আলোচনার জন্ম দেন সারজিস আলম। সেই ঘটনার রেশ কাটার আগেই নয়া বির্তকের মুখে পড়েছেন সারজিস।
আন্দোলন-সংগ্রামের সহকর্মী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সারজিসের ‘অর্থের উৎস’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে একটি পোস্ট দিয়েছেন। স্বচ্ছতা দাবি করে তিনি জবাবও চেয়েছেন।
‘প্রিয় সারজিস’ সম্বোধনে এবং খোলা চিঠির মতো করে জারা লিখেছেন- ‘আমি এই চিঠিটি লিখছি আমাদের দলের একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে, দলের নীতিগত অবস্থান ও স্বচ্ছতার প্রশ্ন থেকে। সম্প্রতি তোমার নিজ জেলায় শতাধিক গাড়ির একটি বড় বহর নিয়ে প্রবেশ করায় জনগণের মনে যৌক্তিকভাবেই কিছু প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
তুমি কিছুদিন আগেই প্রকাশ্যে বলেছিলে, “আমার আসলে এই মুহূর্তে কোন টাকা নাই। ধার করে চলতেছি। এইটাই হচ্ছে রিয়্যালিটি। আমার পকেটে মানিব্যাগও নেই।” তোমার এই সাদাসিধে জীবনযাত্রার কথা আমাদেরকে অভিভূত করেছিলো এবং জনগণের কাছে আমাদের সংগ্রামকে আরও গ্রহণযোগ্য করেছে।
কিন্তু সেই প্রেক্ষাপটে এত বড় একটি আয়োজন কীভাবে সম্ভব হলো — এর অর্থায়ন ও ব্যবস্থাপনা কীভাবে হয়েছে, তা নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন আসাটা স্বাভাবিক। আমাদের দল স্বচ্ছতা, সততা ও জবাবদিহিতার ভিত্তিতে একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সে জায়গা থেকে এসব প্রশ্নের স্পষ্ট ও নির্ভরযোগ্য উত্তর দেওয়া আমাদের সবারই দায়িত্ব।
আমি আশা করি, বিষয়টি তুমি আন্তরিকতার সাথে বিবেচনা করবে এবং জনগণের সামনে একটি গ্রহণযোগ্য ও পরিষ্কার ব্যাখ্যা তুলে ধরবে। এতে জনগণের কাছে দলের ভাবমূর্তি আরও শক্তিশালী হবে বলেই আমার বিশ্বাস।’
সার্জিসের এই ব্যয়বহুল বহর নিয়ে সাধারণ জনগণের মাঝেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ এটিকে রাজনৈতিক প্রচারণার অংশ বলছেন, আবার অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, এত বড় আয়োজন করা যদি সম্ভব হয়, তবে তার আগে অর্থের সংকটের কথা বলে সহানুভূতি আদায়ের কী প্রয়োজন ছিল?
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নাম উল্লেখ না করে ‘ যারা ১০০ গাড়ির শোডাউন দেয় তারা কি করতে পারে জনগণ জানে।’ বলে সমালোচনা করেছেন।
বিষয়টি আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিলেও সার্জিস আলম এই বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেননি। তবে নিজ এলাকায় দ্বিতীয় দিনের গণসংযোগকালে তিনি রিকশা ভ্যান ব্যবহার করেছেন। আর গণমাধ্যমে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আমি যে অর্থ ব্যবহার করেছি, তা স্বচ্ছ ও বৈধ উৎস থেকে এসেছে। কেউ যদি সন্দেহ করে, তাহলে এনবিআরের মাধ্যমে যাচাই করুক।
আমার পারিবারিক কিছু সম্পত্তি রয়েছে, যার মূল্যায়ন বাজারে অনেক বেড়েছে। তাছাড়া আমার ব্যক্তিগত কিছু বিনিয়োগ আছে, যা থেকে আয় হয়েছে। আমার রাজনীতিতে আসার পর থেকেই আমার বিরুদ্ধে নানা ধরনের মিথ্যা প্রচারণা চালানো হচ্ছে।’
মঙ্গলবার রাতে ‘প্রিয় তাসনিম জারা আপু’ সম্বোধনে সার্জিস আলম ফেসবুকে পাল্টা খোলা চিঠি লেখেন। তিনি নানাভাবে ব্যখ্যা করেন নিজ পরিবারের আর্থিক অবস্থাসহ বিতর্কের অনেক বিষয়ে ধারণা দিতে। তবে সার্জিসের দায়সারা জবাবে সন্তুষ্ট হননি বেশিরভাগ মানুষই, যা ফেসবুক পােস্টের নীচে মন্তব্য দেখলেই বোঝা যায়।
এনসিপির ভেতরে একাংশের দাবি, সার্জিস আলম যদি তাঁর সম্পদের উৎস স্বচ্ছ বলে দাবি করেন, তবে তা প্রকাশ্যে আনতে তাঁর আপত্তি কোথায়? প্রশ্ন থেকেই যায়—এতদিন ধরে স্বল্প আয় ও সীমিত জীবনযাপনের কথা বললেও হঠাৎ এত বিশাল অর্থব্যয়ের উৎস কীভাবে সম্ভব হলো? এনবিআর কি সত্যিই তাঁর পারিবারিক সম্পদের হিসাব রাখে?
অন্যদিকে, সারজিসের সমর্থকরা বলছেন, এটি নিছক রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি করার জন্য একটি পরিকল্পিত অপপ্রচার। ঢাকায় ফিরে সারজিস সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সব কিছুর জবাব দেবেন বলেও জানান অনেকে।