বিখ্যাত সংগীতশিল্পী ওজি অসবোর্ন মারা গেছেন

3 Min Read
বিখ্যাত সংগীতশিল্পী ওজি অসবোর্ন । ছবি: সংগৃহীত

রক জগতের কিংবদন্তি, ‘ডার্কনেসের প্রিন্স’ খ্যাত ব্ল্যাক সাবাথের ওজি অসবোর্ন ৭৬ বছর বয়সে মারা গেছেন।

অসবোর্ন পরিবারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে: ‘আমরা যে গভীর দুঃখ অনুভব করছি, তা ভাষায প্রকাশ করা যায় না। আমাদের প্রিয় অসবোর্ন মঙ্গলবার সকালে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। তিনি পরিবার পরিবেষ্টিত অবস্থায়, ভালোবাসায় ঘেরা পরিবেশে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আমরা সবাইকে অনুরোধ করছি, এই সময়ে আমাদের পারিবারিক গোপনীয়তা রক্ষা করতে।’

তাৎক্ষণিকভাবে মৃত্যুর কোনো কারণ জানানো হয়নি। যদিও ওজি অসবোর্ন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছিলেন।

রকের ইতিহাসে অসবোর্ন ছিলেন এক অদ্বিতীয় চরিত্র। তিনি ছিলেন হেভি মেটালের পথিকৃৎ, যিনি নিজের গম্ভীর কণ্ঠস্বর ও বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব দিয়ে পুরো প্রজন্মকে প্রভাবিত করেছেন। তার কুখ্যাতি—স্টেজে বাদুড়ের মাথা কামড়ে ফেলা, মাদকের আসক্তি এবং নিজের স্ত্রীকে হত্যাচেষ্টার মতো ঘটনাও তাকে এক বিশেষ আলোচনার কেন্দ্রে এনেছে।

তবে রিয়্যালিটি শো ‘দ্য অসবোর্নস’ এর মাধ্যমে তিনি আবার নতুনভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করেন। বিশেষ করে তার ঘরোয়া জীবন নিয়ে মজাদার আচরণ ও ভাষার কারণে।

৫ জুলাই অসবোর্ন তার ব্যান্ড ব্ল্যাক সাবাথের মূল সদস্যদের সঙ্গে দীর্ঘ ২০ বছর পর একত্রিত হয়েছিলেন এক বিদায়ী কনসার্টে।

সেদিন তিনি বলেন, ’আমি ছয় বছর ধরে শয্যাশায়ী, আপনারা কল্পনাও করতে পারবেন না আমি কেমন অনুভব করছি। হৃদয়ের গভীর থেকে আপনাদের ধন্যবাদ।’

১৯৪৮ সালে ইংল্যান্ডের বার্মিংহামের অ্যাস্টনে জন্মগ্রহণ করেন জন মাইকেল অসবোর্ন। তার শৈশব ছিল দারিদ্র্যক্লিষ্ট । মাত্র ১১ বছর বয়সে তিনি যৌন নিপীড়নের শিকার হন। এক সময় চুরির দায়ে জেলেও যেতে হয় তাকে।

এই কঠিন জীবনই যেন প্রতিফলিত হয় তার সংগীতের ভাষা। ব্ল্যাক সাবাথ ব্যান্ডের মাধ্যমে তিনি গড়ে তুলেছিলেন এমন এক সংগীত ধারা, যা ছিল ভয়, শিল্প ও প্রতিবাদের মিশেল। ব্যান্ডটি ১৯৭০ সালে তাদের আত্মপ্রকাশ করে এবং এর গান ব্রিটিশ রক সংগীতকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যায়।

তিনি ব্ল্যাক সাবাথের সঙ্গে ছয়টি অ্যালবাম করেন। কিন্তু ১৯৭৯ সালে অতিরিক্ত মাদকাসক্তির কারণে ব্যান্ড থেকে বাদ পড়েন। তবে তিনি একক ক্যারিয়ারে সফল হন।

তার জীবনের অন্যতম আলোচিত ঘটনা ঘটে ১৯৮২ সালে, যখন তিনি ভুল করে স্টেজে একটি মৃত বাদুড়ের মাথা কামড়ে ফেলেন, ভেবে যে এটি একটি স্টেজ প্রপস। এরপর তাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে র‌্যাবিস প্রতিরোধের ইনজেকশন দেওয়া হয়।

১৯৮৯ সালে তিনি স্ত্রী শ্যারন অসবোর্নকে গলা টিপে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন। তবে পরবর্তীতে সম্পর্ক মেরামত করেন। শ্যারনের বুদ্ধিমত্তা ও পরিচালনায় ওজি আবার ফিরে আসেন সংগীত জগতে, এবং ওজফেস্ট নামে এক বিশাল মেটাল উৎসবের সূচনা হয়।

২০০৩ সালে একটি কোয়াড বাইক দুর্ঘটনায় তার ঘাড়, কলারবোন ও পাঁজরে আঘাত লাগে। পরে জানা যায়, তিনি প্রায় পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। ২০০৫ সালে তার পারকিন সিনড্রোম ধরা পড়ে, যা শরীরে কম্পনের সৃষ্টি করে।

২০২0 সালে তিনি ঘোষণা করেন, তিনি পারকিনসনের রোগে আক্রান্ত, এবং ২০২২ সালে তার স্পাইন সার্জারি হয়। এই দীর্ঘ চিকিৎসার সময় তিনি হতাশায় ভুগতে শুরু করেন।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *