বাড়ছে করোনা, আতঙ্কিত না হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানার পরামর্শ

টাইমস রিপোর্ট
6 Min Read
করোনা সচেতনতায় মেট্রোরেলে মাস্ক পরে ভ্রমণ করছেন সাধারণ মানুষ। ছবি: বায়েজীদ আকতার/টাইমস
Highlights
  • চলতি মাসের ১০ দিনে আক্রান্ত ৪০, মৃত্যু ১

দেশে আবারও বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। চলতি মাসের প্রথম ১০ দিনে ৪০ জনের দেহে এ ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন একজন। এ সময় নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে মোট ৩০৪টি। তবে এখনই আতঙ্কিত না হয়ে জরুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

গত ৪ জুন করোনায় আক্রান্ত হয়ে রাজধানীতে একজনের মৃত্যু হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, মারা যাওয়া ওই ব্যক্তি পুরুষ। তার বয়স ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে। তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

মঙ্গলবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দেশে ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আরও ১৩ জন আক্রান্ত হয়েছে।
এতে বলা হয়, এ যাবৎ দেশে মোট আক্রান্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫১ হাজার ৭৬০ জন। ২৪ ঘণ্টায় দুইজন করোনারোগী সুস্থ হয়েছে। এ সময় মোট সুস্থ হয়েছে ২০ লাখ ১৯ হাজার ৩৭৮ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ১০১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ যাবৎ ১ কোটি ৫৭ লাখ ২৬ হাজার ৩৭৯ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এ যাবৎ শনাক্তের হার মোট ১৩ দশমিক শূন্য পাঁচ। সুস্থতার হার ৯৮ দশমিক ৪১ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার এক দশমিক ৪৪ শতাংশ।

কেমন ছিল ২০২০ সালের চিত্র
বাংলাদেশে ২০২০ সালের মার্চ নাগাদ ভাইরাসটি বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম কোভিডে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর প্রথম মৃত্যুর ঘটনাটি ১৮ মার্চ, যার বয়স ছিল সত্তরোর্ধ্ব এবং তিনি অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি রোগেও ভুগছিলেন।
২০২০ সালের প্রথম ১০ দিনে করোনা আক্রান্ত হন ১৪ জন। হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয় ৬ হাজার ৩৯৩ জনকে। আক্রান্ত ১৪ জনের একজন মারা যান। ওই সময় সুস্থ হয়েছিলেন তিনজন।

আশঙ্কার বড় কারণ নেই: আইসিডিডিআর,বি
বাংলাদেশে শনাক্ত হয়েছে কোভিড-১৯ এর নতুন ভ্যারিয়েন্ট, তবে এটি এখনো আশঙ্কার বড় কারণ নেই বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআর,বি)। সোমবার প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়।

আইসিডিডিআর,বি জানায়, বাংলাদেশে অমিক্রনের দুটি নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এক্সএফজি ও এক্সএফসির আবির্ভাব হয়েছে, যা সম্প্রতি কোভিড-১৯ সংক্রমণ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। এই বছরের এপ্রিলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রথম শনাক্ত হওয়া এই জেএন.১ গ্রুপের ভ্যারিয়েন্ট এখন বেশ কয়েকটি অঞ্চলে শনাক্ত করা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়, এই বছরের মে মাসে কিশোরগঞ্জ, রাজশাহী, কুমিল্লা, খুলনা, যশোর, সিলেট, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও দিনাজপুরে অবস্থিত আইসিডিডিআর,বি’র হাসপাতালভিত্তিক ইনফ্লুয়েঞ্জা সার্ভিল্যান্স স্টাডি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে এই ভ্যারিয়েন্ট ৭ শতাংশ ছিল।

আতঙ্কিত হওয়ার কারণ না থাকলেও পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে আইসিডিডিআর,বি বলেও জানানো হয়।

প্রতিষ্ঠানটি পরামর্শ হিসেবে বলেছে, ‘সুরক্ষিত থাকুন, অসুস্থ লাগলে বাড়িতে থাকুন। এ ছাড়া টিকা নিন, বিশেষত যদি বয়স্ক বা ইমিউনোকম্প্রোমাইজড বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হয়। জনাকীর্ণ স্থানে মাস্ক পরুন, নিয়মিত আপনার হাত ধুয়ে নিন বা স্যানিটাইজ করুন।’

অযথা উদ্বিগ্ন নয়
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন টাইমস অব বাংলাদেশকে বলেন, করোনা ভাইরাসের ভ্যারিয়েন্ট পরিবর্তিত হয়েছে, দেশে এখন অমিক্রনের সাব-ভ্যারিয়্যান্ট এক্সএফজি ও এক্সএফসির প্রভাবে মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। তবে অযথা মতো উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।

সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি যেমন-হাত ধোয়া, মাস্ক পরা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা এগুলো মেনে চললে করোনা থেকে সুরক্ষা থাকা সম্ভব, যোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানার পাশাপাশি সমানতালে চালিয়ে যেতে হবে টিকাদান কর্মসূচি। যারা টিকা নিয়েছেন (ছয় মাসের বেশি) বা নেননি তদের টিকা নিয়ে রোগ প্রতিরোধ করতে হবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঁচ নির্দেশনা
ভারত ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ছড়িয়ে পড়ায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার জন্য পাঁচ দফা নির্দেশনা দিয়েছে।

প্রধান নির্দেশনাসমূহের মধ্যে রয়েছে সাবান ও পানি দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ গণপরিবহন ও জনসমাগমস্থলে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা, করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে অন্তত তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখা, অপরিষ্কার হাতে মুখমণ্ডল স্পর্শ না করার জন্য শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সচেতন করা এবং হাঁচি-কাশির সময় টিস্যু বা কনুই দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখা।

সোমবার রাতে ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আজাদ খান বলেন, করোনার নতুন ধরনের বিস্তার রোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাইডলাইন কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে। শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারীদের নিরাপত্তাই আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।

মাস্ক পরার আহ্বান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের
জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় সবাইকে মাস্ক পরার আহ্বান জানিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। বিশেষ করে বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিদের ভিড় এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
৬ জুন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মামুন অর রশিদের পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়, ‘কোভিড ১৯ সংক্রমণ হারের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনা করে জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় সবাইকে মাস্ক পরার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।’

গত ৪ জুন এক বিজ্ঞপ্তিতে তারা জানায়, সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট বিশেষ করে অমিক্রনে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে বাংলাদেশে এর সংক্রমণ প্রতিরোধে ভারত ও অন্যান্য সংক্রামক দেশ এবং বাংলাদেশ হতে ভারত এবং অন্যান্য সংক্রামক দেশে ভ্রমণরত নাগরিকদের জন্য দেশের সব স্থল, নৌ ও বিমান বন্দরের আইএইচআর ডেস্কগুলোতে নজরদারি জোরদার, সচেতনতামূলক ও ভ্রমণ সংক্রান্ত পরামর্শ দেয়া হয়৷

নিতে হবে প্রস্তুতি
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডাক্তার বেনজির আহমেদ টাইমস অব বাংলাদেশকে বলেন, যারা কোভিডের টিকা নিয়েছেন সেটার প্রতিরোধ এখন আর পুরোপুরি কাজ করছে না। আমাদের ঝুঁকি আছে। আমরা আবারও কোভিডে ব্যাপক হারে সংক্রমিত হতে পারি মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, যাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা কম যেমন ডায়াবেটিস, কিডনি ডিজিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যানসার, গর্ভবতী নারীসহ যাদের দীর্ঘমেয়াদি রোগ আছে, তাদের রোগ প্রতিরোধ বিষয়ে জোর দিতে হবে।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *