ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাগেরহাট-৪ আসন বহাল, পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি আসন থেকে বাড়িয়ে আটটিতে উন্নীত, একটি করে আসন বাড়িয়ে সাতক্ষীরায় চারটি থেকে পাঁচ, বরগুনায় দুটি থেকে তিনটি, পিরোজপুর জেলায় তিনটি থেকে বাড়িয়ে চারটি আসন করার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট জেলার বাসিন্দারা।
সোমবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে দ্বিতীয় দিনের শুনানিতে এসব দাবি জানানো হয়।
জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদের সঞ্চালনায় শুনানিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন, চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়ামে শুনানির সময় দাবি-আপত্তিকারী বা আবেদনকারীর কৌঁসুলি নির্ধারিত স্থানে দাঁড়িয়ে নিজের যুক্তি তর্ক তুলে ধরেন। রোববার ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ৩ আসনের শুনানিতে মারামারি হওয়ার পর সেদিন বিকাল থেকে পক্ষ-বিপক্ষের জন্য আলাদা ডায়াসের ব্যবস্থা করা হয়।
সোমবার খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের ২০টি আসনের দাবি-আপত্তির শুনানি হয়। এদিন সাতক্ষীরা-৩ ও ৪; যশোর-৩ ও ৬; বাগেরহাট-১,২ ও ৩; ঝালকাঠি-১; বরগুনা-১ ও ২; পিরোজপুর-১,২ ও ৩; চট্টগ্রাম-৩, ৫, ৮ ও ১০; এবং খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান আসনে খসড়ার পক্ষে-বিপক্ষে আসা আবেদনের শুনানি হয়।
এবার নির্বাচন কমিশন সীমানা নির্ধারণে ভোটার সংখ্যার সমতা আনতে গিয়ে গাজীপুর জেলায় একটি আসন বাড়িয়ে ছয়টি এবং বাগেরহাটের আসন চারটি থেকে কমিয়ে তিনটির প্রস্তাব করা হয়। বাগেরহাটে আগে চারটি আসন ছিল- বাগেরহাট-১ (মোল্লারহাট-ফকিরহাট-চিতলমারী); বাগেরহাট-২ (সদর ও কচুয়া); বাগেরহাট-৩ (রামপাল ও মোংলা) এবং বাগেরহাট-৪ (মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা)।
খসড়ায় বাগেরহাট-১ আগের মতো বহাল রাখা হয়েছে। বাগেরহাট সদর, কচুয়া, রামপাল নিয়ে বাগেরহাট-২ এবং মোংলা, মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা উপজেলা নিয়ে বাগেরহাট-৩ প্রস্তাব করা হয়েছে।
শুনানি শেষে বাগেরহাট-৩ আসনের প্রতিনিধি অ্যাডভোকেট ওয়াহিদুজ্জামান দিপু সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বাগেরহাটে চারটি আসন। হঠাৎ করে ইসি আমাদের বলেছেন চারটি আসন থাকবে না। একটি আসন বাদ দেওয়া বাগেরহাটবাসী মানে না। এটা অযৌক্তিক, আইন পরিপন্থী এবং বাস্তবসম্মত নয়। ইসির এ সিদ্ধান্ত জনস্বার্থের পরিপন্থী।’
তিনি চারটি আসন আগের মতো বহাল রাখার দাবি জানান।
একই আসনের প্রতিনিধি ব্যারিস্টার মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘বাগেরহাটের একটি আসন কমিয়ে বাগেরহাটবাসীর যে অধিকার সে অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। জুলাই বিপ্লবের স্পিরিট বিরোধী কাজ করছে ইসি। আমাদের আন্দোলন সংগ্রামের দিকে ঠেলে দেবেন না বা আমাদের আদালতের দিকে ঠেলে দেবেন না। যাতে ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কোনোভাবে বিঘ্নিত না হয়।’
অন্যদিকে বিএনপির নেতা কাজী মনিরুজ্জামান মনির বলেন, বাগেরহাটে চারটি আসন নয়, দরকার পাঁচটি আসন।
বাগেরহাট-৩ আসনের প্রতিনিধি হিসেবে আসা এনসিপি যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মোল্লা রহমতুল্লাহ অভিযোগ করে বলেন, ‘সংসদীয় আসন নিয়ে গতকাল (রোববার) আমরা আমাদের বক্তব্য পেশ করতে পারিনি। আজও কিন্তু আমরা আমাদের বক্তব্য তুলে ধরতে পারিনি। নির্বাচন কমিশন শুধু একটি দলের জন্যই কাজ করে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। ভোটারের হিসাবে তারা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা আমাদের যৌক্তিক বলে মনে হয় না।’
ঝালকাঠীর দুটি আসনের সীমানায় পরিবর্তন চেয়েছেন ইকবাল হোসেন ফোরকান। তার পক্ষে ইসিতে শুনানি করেন তার কৌশুলী ড. মো শাহজাহান। তিনি বলেন, ‘ঝালকাঠী-১ ও ২ আসনের ভোটার সংখ্যা বিরাট বৈষম্য রয়েছে। বর্তমানে জেলার ৬২ শতাংশ ভোটার ঝালকাঠী-২ আসনে এবং ৩৮ শতাংশ ভোটার ঝালকাঠী-১ আসনে। নলছিটি থানার চারটি ইউনিয়ন- রানাপাশা, সুবিদপুর, কুশঙ্গল ও মোল্লারহাট ঝালকাঠী-২ আসন থেকে কেটে ঝালকাঠী-১ আসনে যুক্ত করার আবেদন জানান। এতে ভোটার সংখ্যার ভারসাম্য আসবে।’
পার্বত্য চট্টগ্রামের আসন আটটি করার দাবি জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজ। ইসির শুনানি শেষে তারা লিখিত বক্তব্যে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের বলা হয়, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি এবং বান্দরবান পার্বত্য তিনটি জেলার আয়তন ১৩ হাজার ২৯৫ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা ১৮ লাখ ৪২ হাজার ৮১৫ জন। এর বিপরীতে তিন পার্বত্য জেলায় মাত্র তিনটি সংসদীয় আসন। সম্ভাবনাময় পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ননকর্মকাণ্ড এবং এখানের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষের জীবনমান পরিবর্তন থেমে আছে প্রয়োজন অনুযায়ী সংসদীয় আসন উন্নীত না করায়। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জন সংসদ সদস্যের পক্ষে ২৬টি উপজেলার মানুষের প্রতিনিধিত্ব করা কষ্টসাধ্য।
লিখিত দাবিতে সই করেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি প্রকৌশলী শাহাদাৎ ফরাজী সাকিব, প্রকৌশলী নাজমুল হক। তাদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি পাইশিখই মারমা, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠাকালীন সিনিয়র সহ-সভাপতি ইব্রাহীম খলিল চৌধুরী।
তারা রামগড়, মানিকড়ি, লক্ষীছড়ি ও গুইমারা নিয়ে খাগড়াছড়ি-১; মাটিরাঙ্গা, মহালছড়ি ও পানছড়ি নিয়ে খাগড়াছড়ি-২; খাগড়াছড়ি সদর ও দীঘিনালা নিয়ে খাগড়াছড়ি-৩; বাঘাইছড়ি, লংগদু ও বরকল নিয়ে রাঙামাটি-১; রাঙামাটি সদর, নানিয়ারচর ও কাউখালী নিয়ে রাঙামাটি-২; জুড়াছড়ি, বিলাইছড়ি, রাজস্থলী ও কাপ্তাই নিয়ে রাঙামাটি-৩; বান্দরবান সদর, রুমা, থানচি ও বোয়াংছড়ি নিয়ে বান্দরবান-১ এবং লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি নিয়ে বান্দরবান-২ আসন প্রস্তাব করেছেন।
দিনভর খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৯ জেলার ১৯টি আসনের সীমানা নিয়ে ৫১৩টি দাবি আপত্তির ওপর শুনানি গ্রহণ করে তা নিষ্পত্তি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।