বাংলাদেশে ‘তাড়াতাড়ি’ একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন দেখতে চায় বলে জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। তিনি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সংকটে ‘ভারতীয় আধিপত্যবাদ’ -এর অভিযোগ সরাসরি নাকচ করেছেন।
দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে তিনি বৃহস্পতিবার এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশে অনেকগুলো রাজনৈতিক দল দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানাচ্ছে, সে ব্যাপারে সাংবাদিকরা দিল্লির অবস্থান জানতে চাইলে জয়সওয়াল বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে নির্বাচন আয়োজন নিয়ে বারবার একটা কথাই বলে আসছি, বাংলাদেশকে তাদের দেশের মানুষের রায় ও ম্যান্ডেট কী, সেটা যাচাই করতে হবে। আর সেটা করতে হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক, সুষ্ঠু ও অবাধ একটা নির্বাচনের মাধ্যমে, খুব তাড়াতাড়ি।’
বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি তার দেশের সংকটের জন্য ‘ভারতীয় আধিপত্যবাদ’কে দায়ী করেছেন, এমন প্রসঙ্গ টেনে প্রশ্ন করা হলে তিনি অভিযোগ সরাসরি নাকচ করে দেন।
জয়সওয়াল বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারকে আমি বলব, তাদের দেশের গভর্ন্যান্স বা প্রশাসনিক ইস্যুগুলো সামলানোর দায়িত্ব কিন্তু তাদেরই। এ ব্যাপারে আমরা যে ধরনের বক্তব্য দেখতে পাচ্ছি বা যে সব মন্তব্য আসছে, তা থেকে মনে হচ্ছে দায়টা যেন তারা অন্য কোনো দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।’
বাংলাদেশ সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আপনাদের মনে করিয়ে দেব, আপনাদের সামনে যে সব নিজস্ব চ্যালেঞ্জ আছে সেগুলো আপনাদেরই দেখতে হবে। তার বদলে যদি বলেন বাইরের অমুক কারণে এই সংকট তৈরি হয়েছে, তাতে কিন্তু কোনো লাভ নেই – সমস্যার ওতে কোনো সমাধান হবে না।’
গত ২৫শে মে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে বেরিয়ে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা ভারতীয় আধিপত্যবাদের কারণে দেশ বড় সংকটের মধ্যে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন। এ জন্য পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ থাকা দরকার বলে তিনি মনে করছেন।’
বাংলাদেশের সরকার প্রধানের এ অভিমত নিয়েই সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিলেন রণধীর জয়সওয়ালকে। এর বাইরেও সাংবাদিকরা বাংলাদেশের প্রসঙ্গ টেনে বেশ কিছু প্রশ্ন করেন।
একজন সাংবাদিক জানতে চান- বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করতে চেয়েছেন এবং পরে সর্বদলীয় বৈঠকও করেছেন, এই পরিস্থিতিতে ভারত কি বিচলিত বোধ করছে?
জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা দুই দেশের সম্পর্কটা যেভাবে দেখি, সেটা আমি আগেও অনেকবার বলেছি যে, আমরা একটা গঠনমূলক ও ইতিবাচক সম্পর্ক চাই। কিন্তু সেই সম্পর্কটার ভিত্তি হতে হবে এমন, যাতে দুই দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও স্বার্থ সেখানে মিলিত হয়।’
এর বাইরে তিনি বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে সরাসরি মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বাংলাদেশ তাদের ভূখন্ডের ভেতর দিয়ে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের জন্য যে মানবিক করিডর দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে, সে ব্যাপারে ভারতের অবস্থান কী? -এমন প্রশ্নের জবাবে রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘আমি আগেও অনেকবার বলেছি, এই ধরনের ডেভেলপমেন্টগুলো, যেটাতে নিরাপত্তাগত প্রশ্ন জড়িত থাকে, সেগুলোর দিকে সব সময়ই আমাদের সতর্ক নজর থাকে।’ করিডর বিষয়ে তিনি ভারতের পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করেননি।