বনানীতে ‘হিট এন্ড রান’ : নিরাপত্তাকর্মীর মৃত্যুর দায় কার?

admin
By admin
4 Min Read
দীন মোহাম্মদকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে প্রাইভেট কার। ছবি: ফেসবুক থেকে নেয়া।

রাজধানীর বনানীতে ‘চাঁনরাতে’ এক প্রাইভেট কারের চাপায় গুরুতর আহত হন নিরাপত্তাকর্মী দীন মোহাম্মদ (৫০)। পরে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়নি, মৃতদেহ দাফনের আগে নেওয়া হয়নি আইনী পদক্ষেপ।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী প্রাইভেট কারের ছবিসহ চালকের তথ্য প্রকাশ পেলে শুরু হয় শোরগোল। অবশেষে প্রায় এক সপ্তাহ পর মামলা নিয়ে শনিবার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাসেল সারোয়ার মামলার কথা নিশ্চিত করেছেন। তিনি টাইমস অব বাংলাদেশকে বলেন, ‘দীন মোহাম্মদ যেখানে কর্মরত ছিলেন সেই প্রাইভেট সিকিউরিটি কোম্পানি ম্যাক্স সিকিউর লিমিটেড সড়ক দুর্ঘটনার কথা জানিয়ে একটি এজাহার দিয়েছে। মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে।’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানা যায়, ৩০ মার্চ রাতে আনুমানিক সাড়ে ১১ টার দিকে বনানীর ১২ নম্বর সড়কে একটি দুর্ঘটনা ঘটে। নিরাপত্তাকর্মী দীন মোহাম্মদকে একজন গাড়িচালক চাপা দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যান। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গাড়িটির ছবি প্রকাশ পেলেও দেখা যায় গাড়িটির নম্বর ঢাকা মেট্রো ঘ ১৮-৬৫৩১। বিভিন্ন তথ্য যাচাইয়ে নিশ্চিত হওয়া যায় গাড়ির মালিক মারিয়া বিনতে মুজিব নামের একজন। আর গাড়িটি তখন চালাচ্ছিলেন তার স্বামী মেহেদি মালেক সজীব। যিনি বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার আব্দুল মালেক উকিলের নাতি বলে পরিচয় দেন।

পুলিশ ইতিমধ্যে জানতে পেরেছে, মেহেদি মালেক সজীব ঘটনার রাতে গুলশান ক্লাবে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। ব্যক্তিগত ঝামেলায় তিনি বেশ রাগান্বিত হয়ে রাতে ক্লাব থেকে বেরিয়ে যান। বাসায় ফেরার পথে তিনি দীন মোহাম্মদকে গাড়ি চাপা দেন এবং সটকে পড়েন।

ম্যাক্স সিকিউর লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মোক্তাদির আল নাহিদ শনিবার বিকেলে টাইমস অব বাংলাদেশকে বলেন, ‘বনানী ১২ নম্বর রোডে রাত আটটা থেকে ডিউটিতে ছিলেন দীন মোহাম্মদ। দুর্ঘটনার পর পরই আমাদের সাব অফিসের স্টাফরা দীন মোহাম্মদকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাকে আগারগাঁওয়ের নিটোর (পঙ্গু) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।’

‘তার মাথায় গুরুতর আঘাত থাকায় সেখান থেকে দ্রুততার সাথে পাশের নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ভোরে কিছু টেস্টের জন্য আবার পঙ্গু হাসপাতালে নেয়া হয়। সকাল সাড়ে আটটার দিকে তিনি বমি করেন, পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’

দেরিতে মামলার বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির জিএম জানান, ‘দীন মোহাম্মদের পরিবারকে মামলা করার বিষয়ে বলা হয়েছিল, তারা করেননি। এ অবস্থায় আমাদের প্রতিষ্ঠানের সহকারী ব্যবস্থাপক (অপারেশন্স) মো. মনির বাদী হয়ে মামলা করেন। সড়ক পরিবহন আইনে গাড়িটির মালিককে আসামি করে মামলা করা হয়।’

সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর একাদশ অধ্যায়ের অপরাধ, বিচার ও দণ্ড (দুর্ঘটনা সংক্রান্ত অপরাধ ১০৫) এ বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তির বেপরোয়া বা অবহেলাজনিত মোটরযান চালনার কারণে সংঘটিত দুর্ঘটনায় কোনো ব্যক্তি গুরুতরভাবে আহত বা নিহত হলে ওই ব্যক্তির অনধিক পাঁচ বৎসর কারাদণ্ড, বা অনধিক পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বনানী থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমানের কাছে তদন্ত অগ্রগতির তথ্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শুক্রবার রাতে মামলা হয়েছে। আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আমাদের তদন্ত চলমান আছে। ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এখনো সংগ্রহ হয়নি, রাতের মধ্যে পেয়ে যাবো।’

আসামির বিষয়ে জানলে চাইলে তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনার সময় গাড়ির চালক ছিলেন মেহেদি মালেক সজীব। আমরা তার বিষয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছি। তদন্তের স্বার্থে এখন বিস্তারিত বলতে পারছি না।’

দীন মোহাম্মদের গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার। সেখানে তাকে দাফন করা হয়েছে।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *