প্রতিটি আটক কেন্দ্রে ছিল ‘নির্যাতনের সরঞ্জাম’: গুম তদন্ত কমিশন

টাইমস রিপোর্ট
2 Min Read
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের কাছে গত ৪ জুন ২০২৫, রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন সভাপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেন। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়

গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সর্বশেষ অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে দেশের প্রায় প্রতিটি আটক কেন্দ্রে নির্যাতনের আলামতের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে বলে জানানো হয়েছে। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে প্রমাণ ধ্বংসের চেষ্টার পরও কমিশন বিভিন্ন কেন্দ্রে নির্যাতনের জন্য ব্যবহৃত বিশেষ জেরা কক্ষ ও যন্ত্রপাতির অস্তিত্ব শনাক্ত করেছে।

প্রতিবেদনের সপ্তম অধ্যায়ে বলা হয়,‘আমরা যেসব আটক কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি, প্রায় প্রতিটিতেই নির্যাতনের জন্য বিশেষভাবে নির্মিত সাউন্ডপ্রুফ কক্ষ ছিল। কোথাও ঘূর্ণায়মান চেয়ার, কোথাও ‘‘যম টুপি’’ বা ঝুলিয়ে নির্যাতনের পুলি সিস্টেম ছিল।’

র‌্যাব-২, র‌্যাব-৪, সিপিসি-৩ এবং টাস্কফোর্স ইন্টাররোগেশন (টিএফআই) সেলে এসব সরঞ্জাম পাওয়া গেছে বলে সংবাদ সংস্থা বাসসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

ভুক্তভোগীদের বর্ণনা অনুযায়ী, তাদের অধিকাংশকেই চোখ বেঁধে, হাতকড়া পরিয়ে সম্পূর্ণ নির্জন কক্ষে আটকে রাখা হতো। তাদের অর্ধেক খাবার দেওয়া হতো এবং শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি মানসিক চাপের মধ্যে রাখা হতো। নির্যাতনের সময় উচ্চ শব্দে গান বাজিয়ে চিৎকার ঢেকে রাখা হতো।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বেশিরভাগ নির্যাতন ছিল পরিকল্পিতভাবে গোপনে পরিচালিত, যাতে আইনি জবাবদিহি এড়ানো যায়। প্রমাণ না থাকার জন্য নির্যাতনের চিহ্ন মুছে ফেলার চেষ্টা, দেরিতে জনসমক্ষে হাজির করা এবং চিকিৎসা না দেওয়া ছিল নিয়মিত কৌশল।

নির্যাতনের মধ্যে ছিল মারধর, যৌনাঙ্গে ইলেকট্রিক শক, ঘূর্ণায়মান চেয়ারে কষ্ট দেওয়া, এবং নানা পদ্ধতিতে দীর্ঘমেয়াদি মানসিক যন্ত্রণা। কমিশন বলছে, এসব ছিল প্রাতিষ্ঠানিক এবং ধারাবাহিক প্রক্রিয়া- যা ক্ষমতার শীর্ষ পর্যায়ের অনুমোদন বা পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া সম্ভব হতো না।

প্রতিবেদনটির শেষ দিকে বলা হয়, ‘এই মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় শুধু সরাসরি সম্পৃক্তদের নয়, বরং সেই সব শীর্ষ কমান্ডার ও নীতিনির্ধারকদেরও, যারা এসব কর্মকাণ্ডে অনুমোদন দিয়েছেন।’

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *