পাহাড়ে সেনা অভিযানে ইউপিডিএফের অস্ত্র-শস্ত্র উদ্ধার

টাইমস রিপোর্ট
4 Min Read
রাঙামাটির বাঘাইছড়ির বাঘাইহাটের দুর্গম পাহাড়ে ইউপিডিএফ-এর আস্তানায় সেনাবাহিনীর অভিযানে একে-৪৭, রাইফেলসহ অস্ত্র গোলাবারুদ উদ্ধার হয়। ছবি: আইএসপিআর
Highlights
  • শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের পর ইউপিডিএফ (প্রসিত) ও জেএসএস (সন্তু)-এর মূল দল এবং তাদের আরো দুটি উপদলের ‘ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতে’ গত আড়াই দশকে হতাহতের সংখ্যাও অনেক। বিভিন্ন সময় নিরাপত্তা অভিযানে ইউপিডিএফ-এর অনেক ক্যাডার অস্ত্র-শস্ত্রসহ গ্রেপ্তারও হয়েছেন।

রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার বাঘাইহাটের দুর্গম পাহাড়ে শান্তিচুক্তি বিরোধী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ, প্রসিত) এর আস্তানায় সেনাবাহিনীর অভিযানে একে-৪৭, রাইফেলসহ অস্ত্র গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে বলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে।

মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে আইএসপিআর জানিয়েছে, সেখানে অভিযান এখনো চলছে। পরে বিস্তারিত জানানো হবে।

তবে ইউপিডিএফ (প্রসিত) মুখপাত্র অংগ্য মারমা বাঘাইহাটের ওই অভিযানের প্রতিক্রিয়ায় মঙ্গলবার টাইমস অব বাংলাদেশকে বলেছেন, ‘এসবই সাজানো নাটক।’

ইউপিডিএফ-কে ‘গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল’ উল্লেখ করে তিনি দাবি করে বলেন, ‘আমাদের কখনো কোনো আস্তানা বা সশস্ত্র তৎপরতা নেই।’

অংগ্য মারমা অভিযোগ করে বলেন, ‘এসবই পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করার পাশাপাশি এখানে স্থায়ীভাবে সেনা শাসন প্রতিষ্ঠা করার ষড়যন্ত্র।’

তিনি বলেন, ‘২০০১ সাল থেকে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক দল হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা প্রয়োজনে বেশ কয়েকটি নির্বাচনও বর্জন করেছি।’

তার আরও অভিযোগ, ‘বিগত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের মতোই বর্তমান সরকারও একই রকমভাবে ইউপিডিএফ-এর বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন অব্যাহত রেখেছে।’

মাদ্রাসা ছাত্র অপহরণ ও হত্যার অভিযোগে ১৯ জুলাই খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে সেনা অভিযানে গ্রেপ্তার ইউপিডিএফ (প্রসিত)-এর জোন কমান্ডার মংসানু মারমা। ছবি: সেনাবাহিনী

 

পরে বিকাল ৫টার দিকে আইএসপিআর  আরেক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ‘সুনিদিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার ভোর তিনটায় সেনাবাহিনীর বাঘাইহাট জোন কর্তৃক ইউপিডিএফ (মূল) এর সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে নরেন্দ্র কারবারি ত্রিপুরা পাড়া নামক একটি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনাকালে, সশস্ত্র দলটি সেনাবাহিনীর উপস্থিতি বুঝতে পেরে সেনা টহল দলের উপর গুলি বর্ষণ করে পালানোর চেষ্টা করে এবং এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক গুলি বিনিময় হয়।’

এতে জানানো হয়, ‘পরে তল্লাশি চালিয়ে ঘটনাস্থল থেকে সেনাবাহিনীর টহলদল কর্তৃক ১টি সাবমেশিনগান, ৩টি দেশীয় তৈরী বন্দুক, ১টি এলজি, ১টি সাব মেশিনগানের ম্যাগাজিন, ১টি পোচ, ৭ রাউন্ড এ্যামোনিশন, ১৭টি খালী খোসা, ২৫টি বিভিন্ন লটের এসএমজির খালী খোসা, ২টি কার্তুজ, ৪টি ওয়াকিটকি, ১টি মটরোলা সেট, ৪টি ওয়াকিটকি চার্জার, ২টি ক্যামেরা, ১টি স্পাই ক্যামেরা সান গ্লাস, ১টি স্পাই ক্যামেরা ডিভাইস চার্জার, ৩টি পেন ড্রাইভ, ৪টি ইউপিডিএফ সংগঠনের পতাকা, ৫টি ইউপিডিএফ সংগঠনের আর্ম ব্যান্ড এবং ১২টি বিভিন্ন প্রকারের বই উদ্ধার করা হয়।’

‘পার্বত্য চট্টগ্রামে সকল জাতিগোষ্ঠীর জানমালের নিরাপত্তা রক্ষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বদ্ধপরিকর এবং ভবিষ্যতেও সশস্ত্র দলগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান অব্যাহত থাকবে,’ উল্লেখ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

পাশ্ববর্তী জেলা খাগড়াছড়ির দীঘিনালা ও পানছড়ির পাহাড়ে পর পর দু’দিন শনি ও রোববার প্রতিদ্বন্দ্বী জনসংহতি সমিতির (জেএসএস, সন্তু) সঙ্গে সশস্ত্র সংঘাতের একদিন পরেই বাঘাইহাটে ওই সেনা অভিযানের খবর এলো।

রোববার জেএসএস-এর সশস্ত্র হামলায় ইউপিডিএফ (প্রসিত)-এর সহযোগী গণতান্ত্রিক যুব ফোরমের একজন সদস্য নিহত হন।
ওইদিন যুব ফোরাম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, প্রতিপক্ষ জেএসএস (সন্তু) গ্রুপের অন্তত ২০ জনের সশস্ত্র গ্রুপের গুলিতে সংগঠনের জেলা শাখার সদস্য খুকু চাকমা নিহত হন।

তাদের অভিযোগ, পানছড়ির ২ নম্বর চেঙ্গী ইউনিয়নের উগুদোছড়ি গ্রামে রোববার বিকাল তিনটার দিকে গুলিতে খুকু চাকমা আহত হওয়ার পর জেএসএস (সন্তু) গ্রুপ ‘বন্দুক ঠেকিয়ে’ তাকে হত্যা করে।

১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের পর ইউপিডিএফ (প্রসিত) ও জেএসএস (সন্তু)-এর মূল দল এবং তাদের আরো দুটি উপদলের ‘ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতে’ গত আড়াই দশকে হতাহতের সংখ্যাও অনেক।

বিভিন্ন সময় নিরাপত্তা অভিযানে ইউপিডিএফ-এর অনেক ক্যাডার অস্ত্র-শস্ত্রসহ গ্রেপ্তারও হয়েছেন।

 

 

 

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *