পাহাড়ের দুর্গম এলাকায় চলমান সেনাবাহিনীর সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ অভিযানে গত সপ্তাহে বান্দরবানের রুমা উপজেলায় বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন ‘কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ)-এর একটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের সন্ধান পাওয়া গেছে। ওই প্রশিক্ষণ ক্যাম্প থেকে ইউনিফর্ম, অন্যান্য প্রশিক্ষণ সামগ্রী এবং রসদসহ বিভিন্ন উপকরণ জব্দ করা হয়েছে।
বুধবার সকালে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে।

এতে বলা হয়, ২৫ জুলাই থেকে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত সেনাবাহিনীর সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ অভিযানের প্রথম মাসেই এ সাফল্য পাওয়া গেছে। অভিযান এখনো চলমান রয়েছে। রুমার সীমান্তবর্তী রেং ত্লাং এলাকার গভীর জঙ্গলাকীর্ণ দুর্গম পাহাড়ে অবস্থিত প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের পাশেই বিশাল মাঠে নিয়মিত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হতো বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রশিক্ষণ মাঠের পাশেই রয়েছে ফায়ারিং রেঞ্জ, পরিখা/বাংকার ও সামরিক কৌশল প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ইউনিফর্ম ও রসদ ছাড়াও সেখান থেকে কাঠের ডামি রাইফেল, স্নাইপার অস্ত্রের সিলিং, মিলিটারি বেল্ট, কার্জ রাখার বেল্ট, পোচ, বুট জুতা, কম্বল, ওয়াকিটকি চার্জার এবং সোলার প্যানেল জব্দ করা হয়। এসব সামগ্রী স্থানীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী আঞ্চলিক সংগঠন ‘কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)’ এবং তাদের সামরিক শাখা ‘কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ)’ ব্যবহার করতে পারে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।

এর আগে, ৩ জুলাই ভোরে রুমা উপজেলার দুর্গম মুলপি পাড়ার পাহাড়ে সেনাবাহিনী এবং কেএনএ’র মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে সহযোগীসহ কমান্ডার পুতিন মারা পড়লেও তার দলের কিছু গেরিলা সদস্য পালিয়ে যায় বলে সে সময় আইএসপিআর জানায়।
আইএসপির জানায়, অভিযানে একাধিক ‘হাইড আউট’ বা গোপন আস্তানার সন্ধান মিলেছে। পাওয়া গেছে অস্ত্র-শস্ত্র ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম।
ওই অভিযানে সেনাবাহিনী ৩টি এসএমজি, ১টি চাইনিজ রাইফেল, ৮টি ম্যাগজিন, ৯ দশমিক ৯৬ মিমি. বল এ্যামো ১৫৪ রাউন্ড, ৩৯ মিমি. এ্যামো ২৩৭ রাউন্ড, ৫৪ মিমি. এ্যামো ৬০ রাউন্ড, ৩ সেট ইউনিফর্ম, ৮টি স্মার্ট ফোন, ৭টি বাইবেল, ওয়ারলেস সেটসহ সামরিক সরঞ্জামাদি উদ্ধার করে। পাশাপাশি অভিযানে বেশকিছু দলিলপত্রও পাওয়া যায়।

যেভাবে কেএনএ’র উত্থান
পাহাড়ের সূত্রগুলো বলছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের সাবেক শিক্ষার্থী নাথান বম পাহাড়ের ৯টি উপজেলা নিয়ে স্বাধীন কুকি রাজ্য প্রতিষ্ঠায় ২০২২ সালে সশস্ত্র তৎপরতা শুরু করেন। প্রথমে প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)’ নামক আঞ্চলিক দল, পরে খোলা হয় এর সামরিক বিভাগ কেএনএ। তখন থেকে অনেকটা প্রকাশ্যেই তারা ফেসবুক ও ইউটিউবে সশস্ত্র তৎপরতা প্রচার করছিল।
এর দু’বছর পর সরকারের সঙ্গে ‘শান্তি সংলাপ’ চলমান থাকা অবস্থায় ২০২৪ সালের ২ এপ্রিল হঠাৎ রুমায় সোনালী ব্যাংক ডাকাতি ও পুলিশের ১০ অস্ত্রশস্ত্র লুট করে কেএনএফ সদস্যরা পালিয়ে যায়। এই অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন বৃহস্পতিবার সেনা অভিযানে নিহত কেএনএ কমান্ডার, ‘ক্যাপ্টেন’ পুতিন।
সশস্ত্র গ্রুপটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় ইসলামী জঙ্গিগ্রুপগুলোকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর কাছে অস্ত্র কেনাবেচার অভিযোগ রয়েছে।
রুমায় ব্যাংক ডাকাতি ও অস্ত্র লুটের ঘটনায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় কেএনএফ-এর তৎপরতা। তবে কথিত ‘ফিল্ড মার্শাল’ নাথান বমের নেতৃত্বে আগেই সীমান্ত পেরিয়ে এর গেরিলা সদস্যদের বেশিরভাগই আশ্রয় নিয়েছে মিজোরাম হয়ে মনিপুরে।