‘রাঙামাটির দুর্গম পাহাড়ে’ আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) মঙ্গলবার এক সংক্ষিপ্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। আইএসপিআরের সহকারী পরিচালক রাশেদুল আলম খান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, ভোর ৪টা থেকে এ অভিযান শুরু হয়েছে।
এখন পর্যন্ত অভিযানের বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
পাহাড়ের সূত্রগুলো বলছে, গত কয়েক বছরের মধ্যে এই প্রথম সেনাবাহিনী ইউপিডিএফ তো বটেই, এমনকি সেখানের কোনো আঞ্চলিক দলের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে অভিযান শুরু করল।
এর আগে ২০ জুন সেনা বাহিনী এক বিজ্ঞপ্তিতে বান্দরবান জেলার টংগবতি ইউনিয়ন থেকে ‘সশস্ত্র ৯ চাঁদাবাজ’ আটকের কথা জানায়।

সে সময় তাদের কাছ থেকে ৪টি গাদা বন্দুক, একটি সেমি-অটো রাইফেল, দুটি গান ব্যারেল, দেশীয় ধারালো অস্ত্র ও চাঁদা আদায়ে ব্যবহার হওয়া অ্যান্ড্রয়েড ট্যাবসহ বিভিন্ন সামগ্রী উদ্ধার করা হয়।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চালানো অভিযান সম্পর্কে ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধারণা পাওয়া যায়, আটককৃত চাঁদাবাজ দলটি পার্বত্য চট্রগ্রামের একটি সশস্ত্র দলের পক্ষে সাধারণ জনগণের নিকট হতে চাঁদা আদায় করে থাকে।’ তবে এতে দলটির নাম প্রকাশ করা হয়নি।
আটক ব্যক্তিরা হলেন পুনর্বাসন চাকমাপাড়ার আনন্দ মোহন চাকমা (৭২), শান্তিরাম চাকমা (৩৩), চাতুই চাকমা (৩৫), শান্তিরঞ্জন চাকমা (৩৫), কল্পরঞ্জন চাকমা (৪৫) ও জ্যোতি বিকাশ চাকমা (২৮) এবং ইমানুয়েল ত্রিপুরাপাড়ার পাখিরাম ত্রিপুরা (৩১), ছতিয় ত্রিপুরা (৬০) ও জুয়েল ত্রিপুরা (২৬)।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ‘পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের চাঁদা দেওয়া থেকে বিরত’ থাকার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কেউ চাঁদা দাবি’ করলে তাৎক্ষণিকভাবে সেনা জোনে জানানোর অনুরোধ জানানো হয়।
পার্বত্য সূত্রগুলো জানিয়েছে, সেখানে এখন সক্রিয় রয়েছে পাহাড়িদের অন্তত ৫টি আঞ্চলিক দল: ইউপিডিএফ (প্রসিত), ইউপিডিএফ (সংস্কারবাদী), জেএসএস (সন্তু লারম), জেএসএস (সংস্কারবাদী) এবং নাথান বমের নেতৃত্বাধীন কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)।
এরমধ্যে আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতি—জেএসএস ‘শান্তিচুক্তি পক্ষের’ ও ইউপিডিএফ ‘শান্তিচুক্তি বিরোধী’ বলে পরিচিত। আর কেএনএফ বান্দরবানের ৯টি উপজেলা নিয়ে ‘স্বাধীন কুকি রাজ্য’ প্রতিষ্ঠার নামে সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতায় বিশ্বাসী।
সন্তু লারমার জেএসএসের সঙ্গে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তিচুক্তির পর গঠিত এসব গ্রুপ গত আড়াই দশকে পরষ্পর বিরোধী ‘ভাতৃঘাতি রক্তক্ষয়ী সংঘাতে’ জড়ালে প্রচুর হতাহত হয়।
বছর খানেক আগে কেএনএফ কে নিষিদ্ধ করা হলেও দুবছর ধরে তারা প্রকাশ্যে ফেসবুকে ও ইউটিউবে সশস্ত্র তৎপরতার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছিল।
ইসলামী জঙ্গিগ্রুপগুলোকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি ২০২৪ সালের ২ এপ্রিল বান্দরবানের রুমায় ব্যাংক ডাকাতির পর নিরাপত্তা অভিযানে কেএনএফ পিছু হটে। সীমান্ত পেরিয়ে এর গেরিলা সদস্যদের অনেকেই আশ্রয় নিয়েছে ওপারে, মিজোরাম হয়ে মনিপুরে।
এর এক বছর পর সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ইউপিডিএফ বিরোধী অভিযানের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এলো।