পাবনায় একই পরিবারের তিন সদস্যকে হত্যার দায়ে তানভীর হোসেন নামে একজনে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত।
অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার (৬০), তার স্ত্রী ছুম্মা খাতুন (৫০) ও দত্তক মেয়ে সানজিদা (১২) হত্যা মামলায় এই রায় দেওয়া হয়। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকেও নিহত দম্পতি ছেলে হিসেবে লালন পালন করেছিলেন।
সোমবার দুপুরে পাবনা অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-৩ এর বিচারক তানবির আহমেদ এ রায় ঘোষণা করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গোলাম সরোয়ার খান জুয়েল বলেন, ‘দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর পর তদন্ত, সাক্ষ্যগ্রহণ ও শুনানি শেষে এ মামলার রায় ঘোষণা করলেন বিচার। রায়ে আসামি তানভীরকে মৃত্যুদণ্ড (ফাঁসি) দেওয়া হয়েছে।’
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আব্দুল জব্বার ছিলেন রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। নিঃসন্তান ওই দম্পতি একদিন বয়সি শিশু সানজিদাকে দত্তক নিয়ে পাবনা পৌর শহরের দিলালপুর মহল্লায় বসবাস করতেন। একই সঙ্গে তারা বাসার পাশে পাবনা ফায়ার সার্ভিস মসজিদের ইমাম তানভীর হোসেনকেও আপন ছেলে মতো লালপালন করতেন। তানভীরও তাদের বাবা-মা বলে ডাকতেন। কিন্তু ধীরে ধীরে তানভীরের মনে জব্বারের নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কারের প্রতি লোভ জন্মায়। পরিকল্পনা শুরু করেন পুরো পরিবারকে হত্যা করে সম্পদ দখলের।
পুলিশ বলছে, পরিকল্পনা মাফিক মসজিদ থেকে ছুটি নেন তিনি। ছুটি শেষ হওয়ার আগেই ২০২০ সালের ৩১ মে রাতে নিজ গ্রাম নওগাঁর হরিপুর থেকে ফিরে জব্বারের দিলালপুর মহল্লার ভাড়া বাসায় উঠেন তানভীর। রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে ঘুমন্ত অবস্থায় ধারালো অস্ত্র ও কাঠ দিয়ে প্রথমে ব্যাংক কর্মকর্তা জব্বার, তার স্ত্রী ছুম্মা খাতুন এবং তাদের মেয়ে সানজিদাকে নৃশংসভাবে হত্যা করেন তিনি। এরপর বাথরুমে গিয়ে গোসল করে রক্তমাখা কাপড় ধুয়ে ফেলেন। পরে নগদ দুই লাখ টাকা, এক লাখ টাকার ভারতীয় রুপি এবং স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে চলে যান।
ঘটনার পাঁচদিন পর ৫ জুন মরদেহ পঁচে দুর্গন্ধ ছড়ালে স্থানীয়রা বিষয়টি জানতে পারে এবং পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ গিয়ে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে।
ঘটনার পরপরই বিষয়টি উদঘাটনে কাজ শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক টিম। সদর থানায় মামলা দায়ের করা হয়। মাত্র একদিন পর ৬ জুন রাতে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার নিজ বাড়ি থেকে তানভীরকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই তিনি হত্যার কথা স্বীকার করেন। পরে তার দেখানো জায়গা থেকে চুরির কিছু মালামাল উদ্ধার করে পুলিশ।