একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস পাওয়ার পর জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম বুধবার সকালে কারামুক্ত হয়ে সরাসরি শাহবাগ মোড়ে দলের আয়োজিত জনসভায় যোগ দেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘এতদিন ন্যায়বিচার ছিল না। এখন ন্যায়বিচারের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে—সব অভিযোগ মিথ্যা ছিল।’

মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সকাল সাড়ে ৯টায় মুক্তি পাওয়ার পর জামায়াতের নেতাকর্মীরা তাকে স্বাগত জানান। জনসভায় আজহার বলেন, ‘মুক্ত হয়ে স্বাধীনতার স্বাদ পাচ্ছি। আদালতকে ধন্যবাদ। ছাত্র ও জনগণকে কৃতজ্ঞতা জানাই ফ্যাসিবাদের পতনে ভূমিকা রাখায়। সেনাবাহিনীও জনগণের পাশে ছিল জুলাই অভ্যুত্থানে।’
তিনি দাবি করেন, কেবল জামায়াতের রাজনীতির কারণে তাকে ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় ফাঁসানো হয়েছিল। যারা অন্যায়ভাবে মৃত্যুদণ্ডে ঝুলেছেন, তাদের স্মরণ করেন তিনি এবং জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচারের দাবি জানান।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় খালাস পাওয়ার পর আজহারুল ইসলাম সকাল ৯টা ৫ মিনিটে কারাগার থেকে মুক্ত হন। আগে থেকেই বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।

ঢাকা বিভাগের কারা উপমহাপরিদর্শক মো. জাহাঙ্গীর কবির এবং ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক সুরাইয়া আক্তার জানিয়েছেন, মঙ্গলবার আপিল বিভাগ থেকে খালাসের রায় পাওয়ার পর রাতে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র কারা কর্তৃপক্ষের কাছে আসে। যাচাই–বাছাই শেষে সকালে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আজহারুলকে মৃত্যুদণ্ড দেন। তবে তার করা আপিলে ২০২৫ সালের ২৭ মে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে তাকে খালাস দেন।
রায়ে বলা হয়, অন্য কোনো মামলা বা আইনগত বাধা না থাকলে আজহারুলকে মুক্তি দিতে হবে।
২০১২ সালের ২২ আগস্ট ঢাকার মগবাজার থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০১৫ সালে মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করেন তিনি। পরে ২০১৯ সালে আপিলের ওপর রায় দেওয়া হয় এবং ২০২০ সালে তা প্রকাশ পায়। এর বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করা হলে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে শুনানি শেষে পুনরায় আপিলের সুযোগ দেওয়া হয়।
সেই শুনানির ফলেই অবশেষে দীর্ঘ ১৩ বছর পর মুক্তি পেলেন আজহারুল।
এদিকে, আজহারুলকে খালাস দেওয়ার প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা।