নৌকা মার্কাকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে: নাহিদ

টাইমস রিপোর্ট
4 Min Read
এনসিপির সমাবেশে আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। ছবি: ফোকাস বাংলা
Highlights
  • নাহিদ ইসলাম বলেন, 'আওয়ামী লীগ এখন আর কোনো রাজনৈতিক দল নয়, এটি একটি ফ্যাসিস্ট দলে পরিণত হয়েছে। দলটির নিবন্ধন বাতিল করে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে। নৌকা মার্কাকে বাংলাদেশ থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে। সরকার যদি বিচার নিশ্চিত করতে না পারে, তাহলে জনতার আদালতেই আওয়ামী লীগের বিচার হবে।'

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে কোনো জাতীয় নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না—এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, নৌকা মার্কাকে বাংলাদেশ থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে। সরকার যদি বিচার নিশ্চিত করতে না পারে, তাহলে জনতার আদালতেই আওয়ামী লীগের বিচার হবে।

শুক্রবার জুমার নামাজের পর রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটকে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। এতে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানার এনসিপির নেতা-কর্মীরা সমাবেশে অংশ নেন।

সমাবেশে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এখন আর কোনো রাজনৈতিক দল নয়, এটি একটি ফ্যাসিস্ট দলে পরিণত হয়েছে। দলটির নিবন্ধন বাতিল করে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে। নৌকা মার্কাকে বাংলাদেশ থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে। সরকার যদি বিচার নিশ্চিত করতে না পারে, তাহলে জনতার আদালতেই আওয়ামী লীগের বিচার হবে। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) রাস্তায় নামতে হচ্ছে, যা দেশের মানুষের সামষ্টিক ব্যর্থতা।’

নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ‘নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ থাকা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টদের অযোগ্য ঘোষণা করতে নির্বাচন কমিশন আগ্রহ দেখায় না। তারা জনগণের সঙ্গে প্রতারণাকারী অংশ হয়ে গেছে। আর আওয়ামী লীগের যারা গ্রেপ্তার হয়েছে, তারা জামিন পাচ্ছে, অন্য দলে যোগ দিচ্ছে– এভাবে তৃণমূলে আবারও পুনর্বাসিত হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অপব্যবহারের অভিযোগ করে তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর ‘আমার সোনার বাংলা’ স্বপ্ন মুজিববাদী সংবিধানে ব্যর্থ হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ইসলামী সংস্কৃতির বিকাশ থেমে গেছে, সমাজতন্ত্রের নামে পুঁজির বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়েছে, গণতন্ত্রের নামে বাকশাল কায়েম হয়েছে। আর ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক দলগুলো গণতন্ত্র রক্ষা করতে পারেনি। পরে ছাত্র-জনতাই রাজপথে নেমেছে। কিন্তু ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’-এর ৯ মাস পার হয়ে গেলেও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা যায়নি, এই বাস্তবতাই আমাদের ব্যর্থতা।’

সাংবাদিকদের সমালোচনা করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘যারা শেখ হাসিনাকে খুনি বলা যায় কি না– এ প্রশ্ন করে, তারা সাংবাদিক না, তারা ফ্যাসিস্টদের দোসর।’

সমাবেশে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট জনগণ ‘আওয়ামী লীগের অবসান’ চূড়ান্ত করে দিয়েছে। সেই সিদ্ধান্তকে অমান্য করে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের যেকোনো চেষ্টাকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের যোদ্ধারা প্রতিহত করবে।

দলের যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের হাইকোর্ট দেখাবেন না। হাইকোর্ট দেখে জুলাই বিপ্লব হয়নি। আমলাতন্ত্রের অজুহাত মানা হবে না। আগে বিচার ও সংস্কার, তারপরই নির্বাচন।’

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনূভা জাবীন বলেন, ‘খুনি হাসিনাকে আমরা বিদায় দিয়েছি। এই বিজয় ধরে রাখতে হবে। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ আর রাজনীতি করতে পারবে না, ইনশাআল্লাহ।’

অন্য এক যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফ উদ্দীন মাহাদী বলেন, ‘খুনি হাসিনাকে ফাঁসিতে ঝোলাতে হবে। তার বিচার না হলে নতুন নির্বাচন মানে শহীদদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।’

যুগ্ম আহ্বায়ক আতিক মুজাহিদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এবং তার দোসররা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তারা দেশে থাকতে পারে না।’

যুগ্ম সদস্যসচিব হুমায়রা নূর বলেন, ‘দিল্লির প্রেসক্রিপশনে বাংলাদেশ চলবে না। খুনি-গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতেই হবে।’

তাহসীন রিয়াজ, মাহিন সরকার, রফিকুল ইসলাম আইনী, সাইফুল্লাহ হায়দার প্রমুখ নেতারা বলেন, ‘আগামী দিনের রাজনীতি হবে আওয়ামী লীগকে চিরতরে বিদায় দেওয়ার রাজনীতি। তাদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, কোনো নির্বাচন নয়।’

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিহত খালেদ সাইফুল্লাহর পিতা কামরুল হাসান। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলের বুকে ৭০টি গুলি করা হয়েছিল। এই হত্যার বিচার না হলে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।’

বিকেলে সমাবেশে যোগ দেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরউদ্দীন পাটওয়ারী, যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ। তাদের বক্তৃতার ফাঁকে ফাঁকে চলতে থাকে নানা শ্লোগান।

সমাবেশ উপলক্ষে গুলিস্তানের জিরোপয়েন্ট থেকে বঙ্গভবনের দিকের প্রধান সড়কে যান চলাচল বন্ধ রায় আশপাশের এলাকায় দেখা দেয় তীব্র যানজট ও জনদুর্ভোগ।

সমাবেশস্থলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছিল সতর্ক অবস্থানে। সব ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয় বলে জানিয়েছে ডিএমপি।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *