দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক ও মার্কসবাদী তাত্ত্বিক হিসেবে পরিচিত অধ্যাপক যতীন সরকারকে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে।
বুধবার রাত ৮টায় তার মরদেহ নেওয়া হয় নেত্রকোনার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে তার সহকর্মী, শিক্ষার্থী, শুভানুধ্যায়ী, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতির সংগঠন, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ তার মরদেহে শ্রদ্ধা জানায়।
নেত্রকোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য খন্দকার মো. আশরাফুল মুনিম, জেলা প্রশাসনের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাফিকুজ্জামান, পুলিশ প্রশাসনের পক্ষে পুলিশ সুপার মির্জা সায়েম মাহমুদ, নেত্রকোনা পৌরসভার পক্ষে পৌর প্রশাসক আরিফুল ইসলাম সরদার, উদীচী জেলা সংসদ, নেত্রকোনা সাহিত্য সমাজ, নেত্রকোনা জেলা প্রেসক্লাব, শিল্পকলা একাডেমী, প্রত্যাশা সাহিত্য গোষ্ঠীসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন যতীন সরকারের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
এ সময় যতীন সরকারের ছেলে সুমন সরকার, মেয়ে সুদীপ্তা সরকারও উপস্থিত ছিলেন।
পরে সেখান থেকে প্রথমে নেত্রকোনা উদীচী কার্যালয়ে এবং পরে শহরের সাতপাই এলাকার রামকৃষ্ণ মিশন রোডের বাসভবন বানপ্রস্থে তার মরদেহ নেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, রাত ১১টার পর নেত্রকোনা মহাশ্মশানে তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান যতীন সরকার। তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর।
গত কয়েকমাস ধরেই বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন এই বর্ষীয়ান শিক্ষাবিদ।
১৯৩৬ সালের ১৮ আগস্ট নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার চন্দপাড়া গ্রামে জন্ম নেন যতীন সরকার। ১৯৫৫ সালে নেত্রকোনা সরকারি কলেজে আইএ ক্লাসে ভর্তি হলে ছাত্রসংসদের সাহিত্য সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৭ সালে বিএন ক্লাসে ভর্তি হন ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে।
কর্মজীবনে তিনি নেত্রকোনার আশুজিয়া হাইস্কুল, বারহাট্টা সিকেপি পাইলট হাই স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। এরপর ১৯৬১ সালে তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্য অধ্যয়নের জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
১৯৬৩ সালে এমএ পাস করার পর ময়মনসিংহের গৌরীপুর হাই স্কুল এবং নাসিরাবাদ কলেজে শিক্ষকতা করেন।
৬০-এর দশক থেকে তিনি ময়মনসিংহ শহরের সব সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে যান। অর্জন করেন বিপুল জনপ্রিয়তা।
যতীন সরকারের লেখা বইগুলোর মধ্যে সাহিত্যের কাছে প্রত্যাশা, পাকিস্তানের জন্ম মৃত্যু-দর্শন, বাঙালির সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্য, প্রাকৃতজনের জীবনদর্শন উল্লেখযোগ্য। পেশাগত জীবনে সাহিত্যের কীর্তিমান অধ্যাপক। সাহিত্য-সমাজ-সংস্কৃতি-ইতিহাস-দর্শন-রাজনীতির পরিসরে তার লেখার উপস্থিতি বলিষ্ঠ। তার কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার ও বাংলা একাডেমি পুরস্কার।