রাজধানীর উত্তরায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদাকে আটকের সময় ‘মব’ সৃষ্টির হোতাদের খুঁজতে মাঠে নেমেছে পুলিশ।
সোমবার এক প্রতিক্রিয়ায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, ‘মব জাস্টিস করা কোনোভাবেই কাম্য নয়, জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রোববার সন্ধ্যায় কে এম নূরুল হুদার বাসায় ঢুকে ‘মব’ তৈরি ও তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ তাকে আটক করে উত্তরা পশ্চিম থানা হেফাজতে নেয়। সেখান থেকে তাকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানার ৫ নম্বর সেক্টরে এ ঘটনার শিকার হন তিনি।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. মহিদুল ইসলাম টাইমস অব বাংলাদেশকে বলেন, ‘মব সৃষ্টিকারীদের আমরা খুঁজছি। সেখানকার আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আমরা যাচাই-বাছাই করছি।’
তিনি আরও জানান, ‘মব সৃষ্টিকারীদের কাউকে আমরা চিনি না। আমরা যাচাই-বাছাই ও তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেব। তাদের বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। তবে এখনো কাউকে শনাক্ত করা বা গ্রেপ্তার করা যায়নি।’
সোমবার সকালে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের মৌচাকে হর্টিকালচার সেন্টার পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) নূরুল হুদাকে আটকের সময় যেভাবে মব জাস্টিস করা হয়েছে তা কাম্য নয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে এ ধরনের ঘটনায় বাহিনীর কেউ জড়িত থাকলে তা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আরও বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনেই ওনার (কে এম নূরুল হুদা) ওপর হামলা করা হয়েছে। এটার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত করে দেখব, কারা জড়িত। এর সঙ্গে যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ জড়িত থাকেন, তবে তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে হামলার বিষয়ে পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. মহিদুল ইসলাম জানান, ‘আমরা বিষয়টি জানার সাথে সাথে আমাদের পেট্রোল টিমকে ঘটনাস্থলে পাঠাই, তারা দ্রুত সেখানে উপস্থিত হয়ে ‘‘মব’’ সৃষ্টিকারীদের কাছ থেকে সাবেক সিইসিকে উদ্ধার করে উত্তরা পশ্চিম থানা হেফাজতে নেয়। পরে তাকে ডিবিতে পাঠানো হয়। পুলিশের উপস্থিতির জন্য তাকে সঠিকভাবে রক্ষা করা গিয়েছে। তবে আমাদের পৌঁছানোর আগে কী ঘটেছে তা জানা নেই।’
এ ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
রোববার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে সরকার জানায়, ‘নূরুল হুদাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা বেআইনি, আইনের শাসনের পরিপন্থী এবং একটি ফৌজদারি অপরাধ। যারা ‘‘মব’’ গঠন করে আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।’
রোববার সন্ধ্যায় উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি হাফিজুর রহমান জানিয়েছিলেন, ‘জনতা’ প্রথমে সাবেক সিইসিকে ঘেরাও করে এবং তার ওপর চড়াও হয়। জনতা তাকে ঘিরে রাখে, পরে পুলিশ গিয়ে হেফাজতে নেয়।
এসব ঘটনা যখন ঘটছিল তখন ঘটনাস্থল থেকে কেউ কেউ ফেসবুক লাইভ করে। লাইভ থেকে দেখা যায়, এক ব্যক্তি তার (কে এম নূরুল হুদা) গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয়; গেঞ্জির কলার ধরে টেনে হেনস্তা করে। এমনকি কেউ একজন জুতার মালা থেকে জুতা খুলে তাকে মারধর করে—এসব দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এর আগে, রোববার দুপুরে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব ‘পালন না করে’ উল্টো ‘ভয়-ভীতি দেখিয়ে’ জনগণের ভোট ছাড়াই নির্বাচন সম্পন্ন করার অভিযোগে মামলা করে বিএনপি। শেরেবাংলা নগর থানায় করা ওই মামলায় নূরুল হুদাসহ ১৯ জনকে আসামি করা হয়।
নূরুল হুদা ২০১৭ সালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে শপথ নেন। তার নেতৃত্বাধীন কমিশনের অধীনে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত হয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।