রাজবাড়ী সদর উপজেলার গোয়ালন্দে নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলার দরবারে হামলার জেরে পুলিশি গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা তিন হাজার ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম জানান, উপ-পরিদর্শক সেলিম মোল্লা শুক্রবার রাতে এ মামলা দায়ের করেন।
এদিকে, নুরাল পাগলার দরবারে হামলা, অগ্নিসংযোগ এবং মরদেহ উত্তোলন করে পুড়িয়ে দেওয়ার পর পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ।

শুক্রবার জুমার নামাজের পর গোয়ালন্দ পৌরসভার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডে নুরাল পাগলার দরবারে বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা চালায় এবং দরবারের ভেতরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় নুরাল পাগলার ভক্তদের সঙ্গে সংঘর্ষে এক ব্যক্তি নিহত এবং শতাধিক মানুষ আহত হন।
পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে হামলাকারীরা পুলিশ সদস্যদের ওপর আক্রমণ চালায় এবং গাড়ি ভাঙচুর করে। এতে ১০ থেকে ১২ জন পুলিশ সদস্য আহত হন। পরে হামলাকারীরা নুরাল পাগলার মরদেহ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে দেয়।
এদিকে নুরাল পাগলার দরবারে হামলা, ভাঙচুর ও তার মরদেহ কবর থেকে তুলে পোড়ানোর ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস উইং। এক বিবৃতিতে প্রেস উইং বলেছে, এ ধরনের ‘ঘৃণ্য বর্বরতা’ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৩ আগস্ট ভোরে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নুরাল পাগল। পরে ওইদিনই সন্ধ্যায় এলাকাবাসীর অংশগ্রহণে তার প্রথম জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয় এবং পরে তার ভক্তানুরাগীদের অংশগ্রহণের দরবার শরীফের ভেতরে দ্বিতীয় জানাজা নামাজ শেষে রাত ১০ টার দিকে তাকে মাটি থেকে প্রায় ১২ ফুট উঁচু স্থানে বিশেষ কায়দায় দাফন করা হয়। পবিত্র কাবা শরীফের আদলে তার কবরের রং করা হয়। এরপর থেকেই বিষয়টি নিয়ে ফুঁসে ওঠেন বিক্ষুব্ধ জনতা। তাদের আন্দোলনের ফলে কবরের রং পরিবর্তন করা হয়।

এ বিষয় নিয়ে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কয়েক দফায় বৈঠক হয় বিক্ষুব্ধ জনতা ও নুরাল পাগলার পরিবারের সদস্যদের। এরপরেও কবর নিচে নামাতে গড়িমসি করে নুরাল পাগলার পরিবারের সদস্যরা।
পরে এ বিষয়ে দুই দফা সংবাদ সম্মেলন করে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন বিক্ষুব্ধ জনতা। কবর নিচে নামানো না হলে কবর ভেঙে ফেলার হুঁশিয়ারিও দেয়া হয়।
তারই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার জুম্মার পর গোয়ালন্দ আনসার ক্লাব মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বিক্ষুব্ধ জনতা। বিক্ষোভ থেকে হামলা চালানো হয় নুরাল পাগলার দরবারে।