গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, দেশের নীতি, রাষ্ট্রীয় নীতি ও সরকারের নীতি অবশ্যই খেটে খাওয়া মানুষের পক্ষে থাকতে হবে। একক কোনো মত চাপিয়ে না দিয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে ভিন্নমতের মীমাংসা করতে হবে।
শনিবার বিকালে বরিশালের অশ্বিনী কুমার হলে আয়োজিত গণসংহতি আন্দোলন বরিশাল জেলার দ্বিতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সম্মেলনে প্রখ্যাত কৃষক নেতা দেওয়ান আবদুর রশিদ নীলুকে সমন্বয়কারী এবং আরিফুর রহমান মিরাজকে নির্বাহী সমন্বয়কারী নির্বাচিত করে ২১ সদস্যবিশিষ্ট জেলা কমিটি গঠন করা হয়।
জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘ভূমিহীন কৃষকরা ভূমি পায়নি, কৃষকরা ফসলের ন্যায্য দাম পায় না, শ্রমিকদের মজুরি বাড়ে না। সরকারি প্রতিষ্ঠানের তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী, আউটসোর্সিং বা দৈনিক মজুরি ভিত্তিক কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধাও বাড়ছে না। অথচ সরকারের এসব বিষয়ে সময় নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘জনগণের দাবি মানতে হবে। দেশের মানুষকে কেন্দ্রেই রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণ করতে হবে।’
গণসংহতির প্রধান সমন্বয়কারী বলেন, ‘অভ্যুত্থানের সুযোগ নিয়ে কিছু উগ্রপন্থী শক্তি রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চাইছে। শেখ হাসিনাকে আমরা তাড়িয়েছি, কিন্তু ধর্মের নাম নিয়ে বা অন্য কোনো নামে কেউ গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিতে চাইলে জনগণ তা মেনে নেবে না।’
তিনি সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘মানবিক মর্যাদা, অধিকার ও গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য সবাইকে সংগঠিত হতে হবে।’
জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের পর বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন এখন গণতান্ত্রিক উত্তরণের কর্তব্য। দেশ এখন সন্ধিক্ষণে আছে, দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র চলছে। তবে আন্দোলনকারী দলগুলোর ভিন্নতা থাকলেও জনগণের হাতে এর মীমাংসা ছেড়ে দিতে হবে।’
তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘যেসব সংস্কারে আমরা একমত হয়েছি তা বাস্তবায়নের বাধ্যবাধকতা তৈরি করুন। আর ভিন্ন মতগুলোর সমাধান করবে জনগণ ভোটের মাধ্যমে।’
তিনি সংবিধান সংস্কারের জন্য আগামী নির্বাচনকে ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদের নির্বাচন’ হিসেবে ঘোষণা করারও আহ্বান জানান।
‘নিরাপদ কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্যসেবা ও উন্নয়নমুখী বরিশাল চাই’ স্লোগান নিয়ে আয়োজিত এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারের সদস্যরা। শুরুতে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
সম্মেলনের সভাপতির বক্তব্যে নবনির্বাচিত সমন্বয়কারী দেওয়ান আবদুর রশিদ নীলু বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান মানবিক ও জনগণের রাষ্ট্র গড়ে তোলার নতুন সুযোগ দিয়েছে।’
বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন—এই তিন দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘সরকারের কাজে জনগণের আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হওয়া প্রয়োজন।’
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভুঁইয়া, বাংলাদেশ কৃষক মজুর সংহতির সাধারণ সম্পাদক আলিমুল কবীর, বাংলাদেশ যুব ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সম্পাদক জাহিদ সুজন, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক ফাতেমা রহমান বিথী প্রমুখ।
গণসংহতি আন্দোলন বরিশাল জেলার নবনির্বাচিত কমিটি
সমন্বয়কারী: দেওয়ান আবদুর রশিদ নীলু
নির্বাহী সমন্বয়কারী: আরিফুর রহমান মিরাজ
সহ নির্বাহী সমন্বয়কারী: মারুফ আহমেদ
সাংগঠনিক সম্পাদক: রুবিনা ইয়াসমিন
সহ সাংগঠনিক সম্পাদক: সাকিবুল ইসলাম সাফিন, রুমা আক্তার
অর্থ সম্পাদক: ইয়াসমিন সুলতানা
প্রচার সম্পাদক: মনির হোসেন
শিক্ষা গবেষণা ও দপ্তর সম্পাদক: হাছিব আহমেদ
এ ছাড়া সদস্যরা হলেন–রাশেদুল ইসলাম, শ্যামলি আক্তার, আব্দুর রশিদ তালুকদার, হাসিনা বেগম, জাকির তালুকদার, তামান্না আক্তার, নুর জাহান বেগম, মো. রেজাউল করিম, সরোয়ার খলিফা, মো. আরিফ হোসেন, মো. খায়রুল হোসেন। আর একটি সদস্যপদ শূন্য রাখা হয়েছে।