নগর ভবনের সভায় ‘মেয়র’ ইশরাক

টাইমস রিপোর্ট
4 Min Read
নগর ভবনের সভায় বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

শপথ নিতে না পারলেও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ‘মাননীয় মেয়র’ পরিচয়ে নগর ভবনে সভা করেছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন।

সোমবার দুপুরে নগর ভবন মিলনায়তনে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে তিনি মতবিনিময় সভা করেন।

সভার ব্যানারে নামের নীচে ‘মাননীয় মেয়র’ লেখা নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে ইশরাক হোসেন বলেন, ‘কেবল নগর ভবন নয়, যে কোনো অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানালে আয়োজকরা ব্যানারে আমার নামের আগে মেয়র লেখেন।’

এটি ‘জনগণের দাবি’ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের মাধ্যমে এটা প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। যারা বিষয়টি নিয়ে কথা তোলার চেষ্টা করছেন তাদের বলব, তারা যেন নিজেদের জ্ঞান আরেকটু সমৃদ্ধ করেন। নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশ করেছে, সেখানে স্পষ্টভাবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে আমাকে ঘোষণা করা হয়েছে।’

মতবিনিময় সভায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় কাজ করতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দেশনা দেন ইশরাক হোসেন।

পরে এক সংবাদ সম্মেলনে ইশরাক বলেন, ‘আপনারা সকলেই জানেন যে কিছুদিন যাবৎ ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ঢাকা শহরকে নিরাপদ রাখার জন্যে মশক নিয়ন্ত্রণের কর্মসূচি রয়েছে। সেটি যাতে চলমান থাকে সেটি নিশ্চিত করতে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মচারীদের সাথে আমরা বৈঠক করছি।’

‘প্রত্যেকটি ওয়ার্ডের সচিবদের সঙ্গে বৈঠক করব। ওয়ার্ড কমিশনের কার্যালয় রয়েছে সেই কার্যালয়গুলোতে জন্ম, নিবন্ধন, মৃত্যু সার্টিফিকেট, ওয়ারিশ সার্টিফিকেট, নাগরিক সার্টিফিকেট এই আবেদনগুলো যেন সেখান থেকেই দিয়ে দেওয়া হয়। পরশুদিন আমরা এখানে স্বাস্থ্য বিভাগের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং কর্মচারীবৃন্দদের সাথে আমরা বৈঠক করব।’

অন্তর্বর্তী সরকার কেবলমাত্র ‘রাজনৈতিক কারণে’ মেয়রের চেয়ারে বসতে দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন ইশরাক।

তিনি বলেন, ‘আমি শুরু থেকেই বলে আসছি যে আমার বিষয়টা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক একটা সিদ্ধান্ত ছিল। রাজনৈতিকভাবে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, আমাকে বা বিএনপির প্রার্থীকে এখানে বসতে দেওয়া হবে না। এখানে তারা তাদের পছন্দের প্রশাসককে বসাবে এবং সেই প্রশাসককে বসানোর মাধ্যমে আগামী জাতীয় নির্বাচনে তারা অবৈধ সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করবে। এটি তাদের উদ্দেশ্য ছিল।’

‘আজ পর্যন্ত, এই মুহূর্ত পর্যন্ত এতদিন যাবৎ আন্দোলন চললেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের যোগাযোগ করা হয় নাই। কোনো ধরনের আলোচনার কোনো উদ্যোগ নেয়া হয় নাই।’- যোগ করেন তিনি।

সরকার ‘প্যারালাল’ প্রশাসন চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করে ইশরাক বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ যখন মেয়রের গেজেট চ্যালেঞ্জ করে করা রিটটি খারিজ করা হয়, সেই মুহূর্তে থেকে ডিএসসিসির প্রশাসক অবৈধ হয়ে গিয়েছে। এখানে প্যারালাল প্রশাসন তারা চালাচ্ছিল। আমি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি এবং আইনের মাধ্যমে আদালতের মাধ্যমে আমার যে বর্তমান অবস্থান সেটাকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এখানে অবৈধভাবে তারা প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে। তারা এখানে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছিল।’

গত ১৪ মে থেকে নগর ভবনের সামনে ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে ইশরাক সমর্থক ও বিএনপি নেতাকর্মীরা। পরে ডিএসসিসি কর্মচারী ইউনিয়নও তাতে যোগ দেয়। ঈদের ছুটির বিরতির পর রোববার ফের নগর ভবনে উপস্থিত হয়ে আন্দোলন শুরু করেন ইশরাক সমর্থকরা। এ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সেবা কার্যক্রমে অচলাবস্থা কাটাতে নিজের তত্ত্বাবধানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেন ইশরাক।

২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেনকে পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস। গত ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে। এর এক মাস পর ইশরাককে ডিএসসিসির মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু আইনি জটিলতার কথা বলে ইশরাকের শপথের আয়োজন থেকে বিরত থাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এমন পরিস্থিতিতেই ইশরাক সমর্থকরা আন্দোলনে নামলে নগর ভবন কার্যত অচল হয়ে পড়ে।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *