দুই মেয়াদের পর বিরতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ চায় বিএনপি

admin
By admin
4 Min Read
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে অংশ নেয় বিএনপির ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল। ছবি: বিএনপির প্রেস উইং

কোনো ব্যক্তি টানা দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না, সংস্কার প্রক্রিয়ায় এ প্রস্তাবের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। তবে দলটি মনে করছে, বিরতি দিয়ে কেউ পরে প্রধানমন্ত্রী হতে চাইলে, সে সুযোগ থাকতে হবে। এটা সংকুচিত করার কোনো যৌক্তিকতা নেই।

বিএনপির এ অবস্থানের কথা জানান দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।

রোববার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় দিনের আলোচনার বিরতিতে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে বেলা ১১টায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় বারের মতো বৈঠক শুরু হয় বিএনপির।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় বিএনপির পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নিয়েছেন। প্রতিনিধিদলের সদস্যরা হলেন, দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাঈল জবিউল্লাহ, আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল ও সাবেক সচিব মনিরুজ্জামান খান।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে এখনো আলোচনা হয়নি। তবে দলের অবস্থান স্পষ্ট। জনগণ যদি কোনো ব্যক্তিকে দুই মেয়াদের পর বিরতি দিয়ে আবার প্রধানমন্ত্রী করতে চায়, সেই সুযোগ সংকুচিত করা উচিত হবে না। আমরা বিষয়টি উন্মুক্ত রাখতে প্রস্তাব দিয়েছি।’

‘একই ব্যক্তি সরকার প্রধান ও দলীয় প্রধান হতে পারবে না- এমন চর্চা আমরা দেখি না। যুক্তরাজ্যেও আমরা দেখি, পার্টি প্রধানই সরকার প্রধান। এটি গণতান্ত্রিক চর্চা। যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রচলন হয় এবং নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রচলন করা যায়, তাহলে সেই ভোটে যারা ক্ষমতায় আসবে, মনে করতে হবে জনগণ তাদেরকে সেই ক্ষমতা দিয়েছে।’

সংস্কার কমিশনের মৌলিক অধিকারের পরিসর বৃদ্ধির বিষয়ে বিএনপি ভিন্ন মতামত দিয়েছে জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘বিএনপির অবস্থান হলো, মৌলিক অধিকার রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হয়। এটার পরিধি বাড়ালে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ব্যয় বাড়বে। তাই আমরা অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত না করে রাষ্ট্র যেটুকু বহন করতে পারবে, সেটুকুই নির্ধারণের পক্ষে জোর দিয়েছি।’

‘কিছু কিছু সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য পদে বিরোধী দলের সদস্যদের মধ্য থেকে চেয়ারম্যান নিয়োগ করা যায়, সবগুলোতে নয়। এক ব্যক্তি দল এবং সরকার প্রধান না হওয়ার প্রস্তাবনায় আপত্তি রয়েছে। এটি দলের স্বাধীনতা। গণতান্ত্রিক চর্চার জন্য অপশন থাকা উচিত। নির্বাচনে প্রার্থিতার বয়স নূন্যতম ২১ বছর করার প্রস্তাবনায়ও বিএনপির দ্বিমত রয়েছে।’

‘ধর্মনিরপেক্ষতা ও বহুত্ববাদের বিপক্ষে অবস্থান জানিয়ে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘আমরা এটার বিপক্ষে মতামত দিয়েছি। বিএনপি সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর আগের অবস্থায় ফিরে যেতে চায়। তবে কমিশন তাদের প্রস্তাবে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে থাকা সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের কথা যুক্ত করতে বলেছেন। বিএনপি সেখানে একমত হয়েছে।’

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সংসদে নারী আসন ৫০ থেকে ১০০-তে উন্নীত করার বিষয়ে বিএনপি একমত। কিন্তু এখন যেমন আছে, সেটা আগামী সংসদ পর্যন্ত বহাল থাকতে হবে। আগামী সংসদ গঠিত হওয়ার পর তাদের (নারীদের) কোন পদ্ধতিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে, তা নিয়ে আলোচনা করা হবে। জনগণের মৌলিক অধিকার হিসেবে ইন্টারনেট প্রাপ্তির বিষয়ে বিএনপি একমত। মৌলিক অধিকার বাড়ানোর ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থার বিষয়টিও দেখতে হবে। তাই আমরা বলেছি, সংবিধানে অনেকগুলো বিষয় যুক্ত না করে, যা রাষ্ট্রের বাস্তবায়নের সক্ষমতা রয়েছে তাই করতে।’

জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের (এনসিসি) থিওরির সঙ্গে বিএনপি একমত নয় জানিয়ে বিএনপির নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এটা বাস্তবায়ন হলে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা অনেক বেশি সংকুচিত হবে।’

এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা কমিশনকে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করতে চাই। সংস্কার নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বেশ কিছু বিষয়ে আমরা কাছাকাছি এসেছি। কিছু কিছু বিষয়ে তাদের সঙ্গে দ্বিমত জানিয়েছি। গণতন্ত্রে মত-দ্বিমত থাকাই স্বাভাবিক। কারণ আমরা বাকশালে বিশ্বাস করি না।’

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *