দিশাহীন ক্রিকেটে অসহায় আত্মসমর্পণ বাংলাদেশের

টাইমস স্পোর্টস
5 Min Read
কুশাল পেরেরার রিভার্স সুইপ, শ্রীলংকার জয় তখন কেবলই সময়ের অপেক্ষা। ছবি: এসিসি

জুবায়ের তানিন, আবু ধাবি থেকে

শনিবার সন্ধ্যায় আবু ধাবির জায়েদ স্টেডিয়ামের একপাশে ‘বাংলাদেশ! বাংলাদেশ!’ গর্জন তো অন্যদিকে ‘শ্রীলংকা! শ্রীলংকা!’ ধ্বনি। অবশ্য শ্রীলংকার দর্শকদের উল্লাসে চাপা পড়ে গেছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আওয়াজ। মাঠের ক্রিকেটেও ছিল একই অবস্থা। টসে জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে চেপে ধরা বোলিংয়ের পর রান তাড়াতেও দাপট দেখাল লংকানরা। 

টপ অর্ডারের ব্যর্থতার দিনে শামীম হোসেন আর জাকের আলীর ৮৬ রানের জুটিতে বাংলাদেশের মান বাঁচানো ১৩৯। জবাবে পাথুম নিসাঙ্কার ফিফটি আর ব্যক্তিগত ১ রানে জীবন পাওয়া কামিল মিশারার ৪৬ রানের ইনিংসে ৬ উইকেটে ম্যাচ হারল বাংলাদেশ। এশিয়া কাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলংকার বিপক্ষে জিতলে সুপার ফোর প্রায় নিশ্চিত ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু এখন গলতে হবে নেট রান রেটের মারপ্যাঁচে। মেলাতে হবে সমীকরণ, তাকিয়ে থাকতে হবে অন্য দলগুলোর ম্যাচের ফলাফলের ওপর।

এই মারকাটারি টি-টোয়েন্টির যুগে মামুলি ১৩৯ রান নিয়ে ম্যাচ জেতা এক প্রকার অসম্ভব সেটাও আরেকবার দেখাল বাংলাদেশ। মাসব্যাপী স্কিল আর ফিটনেস ক্যাম্প, জুলিয়ান উডের পাওয়ার হিটিং সেশন; সবকিছুর পরও অসহায় আত্মসমর্পণ। এর সাথে আরো একটা জিনিস প্রমাণ হলো, আগের ম্যাচে প্রতিপক্ষ হংকং ছিল বলেই সেইফ এপ্রোচে ‘স্মার্ট’ ক্রিকেট খেলে ম্যাচ জেতা গেছে। 

কিন্তু তুলনামূলক শক্তিশালী শ্রীলংকার বিপক্ষে না দেখা গেল সেইফ এপ্রোচ, না ছিল ক্রিকেটারদের স্মার্টনেস। কী করতে চেয়েছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা, সেটাও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না, অন্তত তাদের শরীরী ভাষা সেটাই ইঙ্গিত দিচ্ছিল। আর যেভাবে লংকানদের সামনে বাংলাদেশ হেরেছে, তাতে আত্মসমর্পণ করেছে বলাটা সমীচীনই। বিপর্যয় বোঝাতে আরো জানিয়ে রাখি, ইনিংসের ৩২ বল বাকি থাকতে ম্যাচ হেরেছেন লিটনরা। 

যদিও অল্প পূঁজি নিয়ে শুরুটা ভালোই করেছিল বাংলাদেশ। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে মোস্তাফিজুর রহমানের কাটারে লিটন দাসের হাতে ক্যাচ দিয়েছিলেন কুশাল মেন্ডিস। যিনি বছরের পর বছর বাংলাদেশকে সামনে পেলেও জ্বলে উঠেছেন। আজ অবশ্য নিষ্প্রভই ছিলেন। যদিও কুশালের বিদায়ের পর নিসাঙ্কা আর মিশারার ৯৫ বড় জুটিতে বাকিটা পথ যেতে শ্রীলংকার বেগ পেতে হয়নি। 

যদিও ব্যক্তিগত ১ রানে শরীফুল ইসলামের বলে পুল করতে গিয়ে মিড অনে ক্যাচ তুলেছিলেন মিশারা। ডাইভ করে বল পর্যন্ত হাত ছোঁয়ালেও শেষ পর্যন্ত সেটা আর তালুবন্দী করতে পারেননি শেখ মাহেদী। অবশ্য মিশারার ক্যাচটা মাহেদী ধরে ফেললে ম্যাচের চিত্র খুব একটা বদলাত কিনা, সেটা নিয়েও সংশয় থেকেই যায়। জীবন পেয়ে সেটা ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছেন বাঁহাতি মিশারা, শেষ পর্যন অপরাজিত ছিলেন ৪ ছক্কা ও ২ চারে ৩২ বলে ৪৬ রানে। 

৬ ছক্কা আর ১ চারে ৩২ বলে নিজের ১৬ নম্বর ফিফটি পেয়েছেন নিসাঙ্কা। যদিও তাকে ফিরিয়েই বোলিংয়ে নিজেদের দ্বিতীয় সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ। মাহেদীর শর্টার লেংথের বলে ক্যাচ দিয়েছেন ডিপ ফাইন লেগে শরীফুলের হাতে। নিজের শেষ ওভারে পেয়েছেন কুশাল পেরেরার উইকেটও। তানজিম হাসান সাকিব নিয়েছেন দাসুন শানাকার উইকেট। 

এর আগে টপ অর্ডারের ব্যর্থতার দিনে শামীম হোসেন পাটোয়ারি আর জাকের আলী অনিকের ৮৬ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ৫ উইকেটে ১৩৯ রান করে বাংলাদেশ। ইনিংসে একমাত্র ছক্কা মারা শামীম শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ৩৪ বলে ৪২ রানে, সমান ৩৪ বল খেলা জাকেরের ব্যাট থেকে এসেছে ৪১* রান। এই দুজনের ইনিংস ছাড়া একমাত্র দুই অংকের ঘরে যেতে পেরেছেন লিটন দাস। ২৬ বলে ২৮ রান করেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। 

টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারেই বোল্ড ওপেনার তানজিদ তামিম। নুয়ান থুসারার প্রথম পাঁচটা বল ঠেকিয়ে দিলেও শেষ বলের মুভমেন্টের সাথে আর পেরে ওঠেননি এই বাঁহাতি ওপেনার। লাইন মিস করে বোল্ড হয়েছেন রানের খাতা খোলার আগেই। এর নেপথ্যে মাঠের পূর্ব দিক থেকে বইতে থাকা জোরালো বাতাসেরও একটা অবদান আছে। উত্তর-দক্ষিণে গ্যালারি, বাকি দুই দিকেই খোলা। পরের ওভারে টিপিক্যাল আবু ধাবির উইকেটের এক্সট্রা বাউন্সে খাপ খাওয়াতে না পেরে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন পারভেজ ইমন। স্কোরকার্ডে প্রথম দুই ওভার শেষে বাংলাদেশের রান শূন্য, উইকেটের ঘরে দুই সংখ্যা। 

৫৩ রানে পাঁচ উইকেট হারানোর পর লড়াই যা একটু করেছেন জাকের আর শামীম এর আগে লিটন চেষ্টা করেছিলেন শুরু ধস সামলাতে। পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে দাসুন শানাকাকে মেরেছিলেন তিন চার। স্কোরবোর্ডে ফিরেছিল একটা ভদ্রস্ত চেহারা। কিন্তু দুই ওভার পরই ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে কিপারে হাতে ক্যাচ দিয়ে বাংলাদেশের জীর্ণ চেহারাটা ফুটিয়ে তুলেছেন লিটন। এর আগে শেখ মাহেদীও ফিরেছেন হাসারাঙ্গার গুগলিতে এলবিডব্লিউ হয়ে। 

চারে নামা তাওহিদ হৃদয়ের দিকে নজর ছিল সবার। অফ ফর্ম, সংবাদ সম্মেলনে নিজের দুঃসময়ের কথা অকপটে স্বীকার করা, এর ওপর ব্যাটিং এপ্রোচ আর ইনটেন্ট নিয়ে সমালোচনায় বিদ্ধ। সুযোগ ছিল তার সামনে সবকিছু একপাশে ফেলে দলের প্রয়োজনে ব্যাটটা চওড়া করা। কিন্তু মিড অফে ক্রস ব্যাটেড একটা শটে ক্যাচ তুলে একটা জীবন পেলেও পরের বলেই হয়েছেন রান আউট, তাও ডিপ স্কয়ার লেগ থেকে দুর্দান্ত এক থ্রোতে। হ্যাঁ, আবু ধাবির বাউন্ডারি বেশ বড়, তবে প্রেস বক্স থেকে বসে কোনোভাবেই মনে হয়নি ওই পজিশনে বল রেখে অন্তত তিন রানের জন্য দৌড়ানো সম্ভব!

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *