দামে আপত্তি নিয়েই চলছে চামড়া সংগ্রহ

টাইমস রিপোর্ট
4 Min Read
চামড়া সংগ্রহ করে রাখা হচ্ছে রাজধানীর ধানমন্ডি সায়েন্স ল্যাব এলাকায়। ছবি: অনিক রহমান/টাইমস

কোরবানির পশু জবাইয়ের পর শনিবার সকাল থেকেই শুরু হয়েছে চামড়া সংগ্রহের কাজ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাদ্রাসা ও এতিমখানার ছাত্ররা তা সংগ্রহ করছেন। দাম কম হওয়ায় এবার মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীদের দেখা নেই। অনেকেই স্বেচ্ছায় মাদ্রাসায় চামড়া দিচ্ছেন, আবার অনেক মাদ্রাসা চামড়া কিনে নিচ্ছে কম দামে।

কোরবানির ঈদের দিন সকাল থেকে সাভারের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। ঢাকাসহ সারাদেশের চিত্র প্রায় অভিন্ন বলেই জানালেন চামড়া সংগ্রহে জড়িতরা।

পশু কোরবানির পর সাধারণত বিভিন্ন বাসাবাড়ি থেকে চামড়া সংগ্রহ করেন স্থানীয় মৌসুমি ব্যবসায়ী ও মাদ্রাসা-এতিমখানার শিক্ষার্থীরা। তারা এসব চামড়া নিয়ে ট্যানারিমালিক বা চামড়া লবণজাতকারী ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। এভাবে লবণ দেওয়া চামড়া শেষ পর্যন্ত ট্যানারিতে পৌঁছায়।

কোরবানির প্রথম দিন দুপুরে সাভারের প্রায় সবকটি মাদ্রাসা ও এতিমখানার সামনে চামড়ার স্তুপ দেখা গেছে। এসব চামড়া পরবর্তীতে সাভারে ট্যানারিতে পাঠানো হচ্ছে। ট্যানারি মালিকরা প্রতিনিধি পাঠিয়ে মাদ্রাসা- এতিমখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।

চামড়া সংগ্রহ করে রাখা হচ্ছে সাভারের বিভিন্ন এলাকায়। ছবি: টাইমস

সাভারের আড়তগুলোতে আসতে শুরু করেছে রাজধানী ও আশপাশের এলাকার কোরবানির পশুর চামড়াও। তবে দাম নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে অসন্তোষ। লোকসানের ভয়ে সরকার নির্ধারিত মূল্যে চামড়া কিনতে চাইছেন না আড়তদাররা।

বেলা ১২টার দিকে সাভারের চামড়া শিল্পনগরী সংলগ্ন আড়তগুলোতে দেখা যায়, ইজিবাইক ও অটোরিকশায় আশপাশের এলাকা থেকে আসছে কোরবানির চামড়া। চলছে চামড়া নিয়ে দরকষাকষি।

প্রতিপিস গরুর চামড়া মানভেদে ৬০০-৭০০ টাকা দাম হাঁকছেন আড়তদাররা। আর ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ছাগলের চামড়া।

রাজধানীর প্রবেশ মুখ আমিনবাজারে প্রতিবারের মত এবারও কয়েক হাজার চামড়া লবণ দিয়ে মজুদ করা হয়েছে।

চামড়া সংগ্রহ করে রাখা হচ্ছে সাভারের বিভিন্ন এলাকায়। ছবি: টাইমস

সাভার কাঁচা চামড়া আড়ত মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. এমদাদুল হক সোহরাব বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া কেনা সম্ভব নয়। কারণ, চামড়ার সঙ্গে লবণ ও শ্রমিক খরচ যুক্ত হবে। নির্ধারিত দামে চামড়া কিনলে লোকসান হবে।’

চলতি বছর কোরবানির মৌসুমে রাজধানী ঢাকার মধ্যে লবণযুক্ত চামড়ার সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৩৫০ টাকা। ঢাকার বাইরে সর্বনিম্ন দাম ১ হাজার ১৫০ টাকা। চামড়ার আকার বড় হলে দাম আরও বেশি পাওয়া যাবে। তবে কোরবানির পরপর সাধারণত লবণ ছাড়া কাঁচা চামড়া বিক্রি হয়। এ ধরনের চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় না। ক্রেতা–বিক্রেতারা দর–কষাকষির মাধ্যমে দাম চূড়ান্ত করেন।

চামড়া সংগ্রহ করে রাখা হচ্ছে ধানমন্ডি সায়েন্স ল্যাব এলাকায়। ছবি: অনিক রহমান/টাইমস

ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ৬০ থেকে ৬৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া খাসির চামড়ার ক্রয়মূল্য প্রতি বর্গফুট ২২ থেকে ২৭ টাকা এবং বকরির চামড়ার দাম ২০ থেকে ২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

অন্যদিকে গরুর প্রতিটি কাঁচা চামড়ার দাম ২০২৪ সালে ঢাকায় ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি নির্ধারণ করা হয়। যা ছিল আগের বছরের তুলনায় বেশি। তারপরও নির্ধারিত দরের চেয়ে ২৭৫-৩০০ টাকা কমে বিক্রি হয়েছে গরুর চামড়া। ছাগলের চামড়া কিনতে অনীহা দেখিয়েছেন আড়তদারেরা। গত বছর ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ১০ টাকায়। ঢাকার পোস্তায় মান ও আকারভেদে প্রতিটি গরুর চামড়া ২০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

এবছর সারা দেশে কোরবানি হয়েছে কয়েক লাখ পশু। ঈদের দ্বিতীয় দিনে অনেক স্থানে কোরবানি হবে। এখন চলছে চামড়া সংগ্রহ। ঢাকা শহরের ভেতরে বেশির ভাগ চামড়া সংগ্রহ করে রাখা হয় সায়েন্স ল্যাব এলাকায়। বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে আসতে শুরু করেন বিক্রেতা ও ফড়িয়ারা। পরে তা নেওয়া হয় সাভারে।

এদিকে সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে শুরু হয়েছে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের কার্যক্রম। রাজধানীসহ আশেপাশের অঞ্চল থেকে ট্যানারীর বিভিন্ন কারখানায় আসছে চামড়া।

শনিবার দুপুরের পর থেকে ট্রাকে ট্রাকে চামড়া ঢুকছে সাভারের হেমায়েতপুরের ঝাউচরের চামড়া শিল্প নগরীর কারখানাগুলোতে। ট্রাক ও পিকআপ যোগে চামড়া আনা হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন মাদ্রাসা ও এতিমখানা থেকে আসা কাচা চামড়া সংগ্রহে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন শ্রমিকরা। ট্যানারিতে এবার ১ কোটির বেশি চামড়া সংগ্রহ হতে পারে বলে ধারণা করছেন ব্যবসায়ীরা।

 

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *