জুলাই অভ্যুত্থানের পর মমতাজ বেগম গত ৯ মাস ধরে আত্মগোপন করেছিলেন রাজধানীতেই। মানিকগঞ্জের সাবেক এমপি ও এই সংগীত শিল্পী এ সময় একাধিক বাসাও পাল্টান। ভারতের একটি অনুষ্ঠানের সংক্রান্ত অর্থ আত্মসাত মামলায় পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুর আদালতে তার বিরুদ্ধে রয়েছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। এ কারণে দলের অন্য নেতাদের মতো সীমান্ত অতিক্রমের সাহস পাননি তিন।

গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বলছে, এ সময় গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি ত্যাগ করেন বিলাসবহুল ব্যাক্তিগত কালো রংয়ের জিপ ও দুটি প্রাডো গাড়ি । কাজ থেকে ছাঁটাই করেন গাড়ির ড্রাইভার জয়নাল ও জামাল, বিউটিশিয়ান সালেহাকে। তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা সজল ও জুয়েলও চলে যান আত্মগোপনে। তার চলাফেরাও হয়ে পড়ে সীমিত। রীতিমত থ্রিলার সিনেমার মমতাজ বেছেন নেন আত্মগোপনের জীবন। এ সময় শুধু জরুরি প্রয়োজনে বের হতে রাতের বেলা, তা-ও বোরখা পরে।
জানা গেছে, সিংগাইর উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ারা খাতুন একসময় ছিলেন মমতাজের ছায়াসঙ্গী। বেগতিক বুঝে তিনিও অনেকদিন আগে হন লাপাত্তা।

ডিবির একাধিক কর্মকর্তা জানান, ৫ আগস্টে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর ঢাকার বসুন্ধরা বারিধারা এলাকার বাস ছেড়ে লালমাটিয়ায় এক ঘনিষ্ঠজনের বাসায় ওঠেন মমতাজ। সেখানে কিছুদিন কাটিয়ে গুলশানে যান আরেকজনের বাসায় তিনি। সবশেষ আত্মগোপন করেন ধানমন্ডিতে। ভারতের কলকতায় সংগীত মহলের সঙ্গে ঝামেলার জেরে তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি হওয়ায় তিনি সীমান্ত পেরুনোর চেষ্টা করেননি।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর হত্যা মামলার আসামি মমতাজকে ধরতে মানিকগঞ্জ ও ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশ ও র্যাব একাধিক অভিযান চালায়। কিন্তু তার অবস্থান সনাক্ত করা সহজ ছিল না।
আত্মগোপনের এই নয় মাসে শিল্পীর সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখেছিলেন সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, ভিপি শহীদের সঙ্গে। সম্প্রতি তিনি আদালতে আত্মসমর্পণের পর মমতাজ অনেকটা ভীত হয়ে পড়েন। সন্ত্রস্ত হন। এর মধ্যে তিনি দুই সাবেক গাড়ি চালকের সঙ্গে বিভিন্ন সময় যোগাযোগ করেন। আর ভিপি শহীদকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার পরেই মূলত মমতাজ সম্পর্কে হালনাগদ তথ্য পেতে থাকেন গোয়েন্দারা।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, অবশেষে সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ধানমন্ডির স্টার কাবাবের পেছনের একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রাতেই তাকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, এছাড়া ২০১৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি হরতালের সমর্থনে মানিকগঞ্জ-সিঙ্গাইর-হেমায়েতপুর সড়কের গোবিন্দল নতুন বাজার এলাকায় মিছিল বের করেন ইসলামী সমমনা দলগুলোর নেতা-কর্মীরা। এতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ছোড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে বাদীর ছেলে নাজিম উদ্দিন মোল্লাসহ চারজন নিহত হন। নিহত অন্য তিনজন হলেন গোবিন্দল গ্রামের মাওলানা নাসির উদ্দিন, আলমগীর হোসেন ও শাহ আলম।
এ ঘটনায় ২০২৪ সালের ১০ আক্টোবর মমতাজ বেগম ও ৩৭ পুলিশ সদস্যসহ ৯০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৬০ জনকে আসামি করে মানিকগঞ্জ আদালতে দায়ের হয়েছে একটি হত্যা মামলা।
অন্যদিকে, গত বছরের ২৩ অক্টোবর মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর থানায় মমতাজ বেগম, দেওয়ান জাহিদ আহমেদসহ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের ১০৯ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হয়েছে আরেকটি হত্যা মামলা। সিঙ্গাইরে প্রায় এক যুগ আগে হরতালের মিছিলে পুলিশের গুলিতে চারজন নিহত হওয়ার ঘটনায় দায়ের হওয়া এ মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে করা হয় আসামি।