তিন কারণে বাড়ছে নারী নির্যাতন

কামরুজ্জামান খান
4 Min Read
প্রতীকী ছবি
Highlights
  • এমএসএফ-এর প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান বলেন, রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তনের পর সবার আশা ও প্রত্যাশা ছিল নারী নির্যাতন কমবে। তা না হয়ে বরং বেড়েছে।

দেশে নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ছেই। নারী ঘরে ও বাইরে নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। নির্যাতনের কারণে অনেকের মৃত্যু হচ্ছে আবার অনেকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেক ঘটনায় মামলা হচ্ছে আবার অনেক ঘটনা আড়ালেই থাকছে।

নারী নেত্রীরা বলছেন, অনৈতিক সম্পর্ক, পারিবারিক কলহ ও যৌতুকের কারণে নারী নির্যাতন হচ্ছে। সামাজিক নিরাপত্তার অভাবে ঘটছে ধর্ষণ বা সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা। সরকারের সমন্বয়হীনতা ও তদারকির অভাব এবং আইনের সঠিক প্রয়োগ না হওয়ায় এ ধরনের অপরাধ কমছে না বরং অনেক ক্ষেত্রে বাড়ছে।

মহিলা পরিষদ সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম টাইমস অব বাংলাদেশকে বলেছেন, নারী বিদ্বেষী মনোভাব, প্রতিহিংসার সমাজ ও বিচার না হওয়ার সংস্কৃতির কারণে নারী নির্যাতন কমছে না। ধর্মীয়ভাবে নারী বিদ্বেষী প্রচারণা এখনো চলছে। অথচ সরকার কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না।

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) পরিসংখ্যান মতে, জানুয়ারিতে ২৭১, ফেব্রুয়ারিতে ২৯৫, মার্চে ৪২৮, এপ্রিলে ৩৬২, মে মাসে ৩৫০, জুনে ৩৬৪ ও জুলাইয়ে ৩৫২টি নারী নির্যাতন ও নীপিড়নের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ধর্ষণ, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা, ধর্ষণচেষ্টা, যৌন হয়রানি, নারী নির্যাতন, এসিড নিক্ষেপ, আত্মহত্যা, খুন, অপহরণ বা নিখোঁজ, অবৈধ গর্ভপাত ও নবজাতক উদ্ধারের ঘটনা রয়েছে।

এমএসএফ-এর প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান বলেন, রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তনের পর সবার আশা ও প্রত্যাশা ছিল নারী নির্যাতন কমবে। তা না হয়ে বরং বেড়েছে।

এজন্য স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি, রাজনৈতিক দল বা নেতৃবৃন্দের অনুপস্থিতি ও পুলিশের গাছাড়া ভাব অনেকাংশে দায়ী। সরকারের অনেক এনজিও ব্যক্তিত্ব থাকলেও নারী নির্যাতন বন্ধে তারা কোনো কার্যকর পদক্ষেপ রাখছেন না বলেও জানান তিনি।

আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) নারী নির্যাতনের ঘটনাকে কয়েক ভাগে ভাগ করেছে। এর মধ্যে স্বামীর নির্যাতন, শ্বশুরবাড়ির লোকের নির্যাতন, স্বামীর হাতে খুন, শ্বশুরবাড়ির লোকের হাতে খুন, নিজ পরিবারের হাতে খুন, নিজের পরিবারে নির্যাতিত ও আত্মহত্যা উল্লেখযোগ্য। ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে আসকের প্রতিবেদনে।

২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত স্বামী কর্তৃক ৩৩ জন নির্যাতন, শ্বশুরবাড়ির লোক কর্তৃক ১১ জন নির্যাতন, স্বামীর হাতে ১৮০ জন খুন, শ্বশুরবাড়ির লোকের হাতে ৪০ জন খুন, নিজ পরিবারের হাতে ৫৮ জন খুন, নিজের পরিবারে ২৭ জন নির্যাতিত ও ১৭৪ জন আত্মহত্যা করেছে। ৫২৩ ঘটনায় ২১১টি মামলা হলেও ৩১২ ঘটনায় মামলা হয়নি।

চলতি বছরের গত ৭ মাসে স্বামী কৃর্তক ১৭ জন নির্যাতন, শ্বশুরবাড়ির লোক কর্তৃক ৭ জন নির্যাতন, স্বামীর হাতে ১৩৩ জন খুন, শ্বশুড়বাড়ির লোকের হাতে ৪২ খুন, নিজ পরিবারের হাতে ৩৩ জন খুন, নিজের পরিবারে ১৭ নির্যাতিত ও ১১৪ জন আত্মহত্যা করেছেন। ৩৬৩ ঘটনায় ১৫০টিতে মামলা হয়েছে ২১৪ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি।

পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪ সালের চেয়ে গত ৭ মাসে শ্বশুরবাড়ির লোকের হাতে নারীর মৃত্যু বেড়েছে।

আসক বলছে, ২০২৪ সালে ২৯৬ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের পর ২৭ জনকে হত্যা করা হয়েছে। ধর্ষণের শিকার ৩ জন আত্মহত্যা করেছেন। এর মধ্যে ৩৩৪টি ঘটনায় মামলা হয়েছে। ৬৪ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। ১০৯ ধর্ষণ চেষ্টার ৬৫টিতে মামলা হলেও ৪৪টি ঘটনায় মামলা হয়নি।

মানবাধিকার আইনজীবী অ্যাডভোকটে সালমা আলী বলেন, আইনের সঠিক প্রয়োগ না থাকায় এবং ভুক্তভোগী সহায়তা না পাওয়ায় নারী নির্যাতন কমছে না। সরকারের ভেতরে সমন্বয় ও তদারকির অভাবে অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছেন। থানা পুলিশ এখনো পুরোপুরি নারীবান্ধব হতে না পারায় অনেকে ঘটনা আড়ালে থেকেইে যাচ্ছে।

পুলিশের তথ্য মতে, জাতীয় জরুরি সেবা ‘৯৯৯’-এ গত জানুয়ারি থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সাড়ে ৮ মাসে নারী নির্যাতনের ঘটনায় ১৭ হাজার ৩৪১টি কল এসেছে। এর মধ্যে পারিবারিক নির্যাতনের অভিযোগে কল এসেছে ৯ হাজার ৭৪৬টি। এসব কলের মধ্যে শুধু স্বামীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ এসেছে ৯ হাজার ৩৯৪টি।

নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জাতীয় নারী সুরক্ষা হেল্পলাইন ‘১০৯’-এ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ৭ মাসে শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের শিকার নারীর জন্য সহায়তা চেয়ে কল এসেছে ৪৮ হাজার ৭৪৫টি।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *