ডিম কিনতেই গ্রাহককে সপ্তাহে বাড়তি গুনতে হচ্ছে ২০০ কোটি

টাইমস রিপোর্ট
3 Min Read

নিম্ন আয়ের পরিবারের জন্য প্রোটিনের সবচেয়ে বড় উৎস সাশ্রয়ী মূল্যের ডিমের দাম এখন অনেক বাড়তি। গত দুই সপ্তাহে এই দাম প্রতি ডজনে বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। দেশের জনসংখ্যার একটি বৃহৎ অংশের পুষ্টি নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ তৈরি করেছে এই মূল্যবৃদ্ধি।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দুই সপ্তাহ আগে খামারের ডিম ডজনে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন সেই দাম ১৪৫ থেকে ১৫৫ টাকায় পৌঁছেছে।

পাইকারি বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বর্ষাকালে বাড়তি চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম থাকায় ডিমের দাম বেড়েছে।

স্থানীয় খামারিরা অভিযোগ করেন,  প্রচণ্ড গরমের কারণে মুরগির মৃত্যুর হার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মুরগির খাবারের দামও বেড়েছে। তার ওপর বিদ্যুৎ বিলও বেড়ে যাওয়ায়, বেড়েছে উৎপাদন খরচ। এসব কারণেই ডিমের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে।

অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার টাইমস অব বাংলাদেশকে বলেন, ‘সরকারের কাছ থেকে ১ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা কর ছাড় পাওয়া সত্ত্বেও করপোরেটরা ইচ্ছামতো দাম বাড়ায়। অন্যদিকে, দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ ডিম সরবরাহকারী ক্ষুদ্র খামারিরা কোনো প্রণোদনা পান না।’

ডিমের বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরানো খুবই জরুরি। আমরা বারবার সরকারকে সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য অনুরোধ করেছি, কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি,’ যোগ করেন তিনি।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার এবং আশেপাশের দোকানে ভোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা এখন প্রতিটি  ডিমের জন্য দুই থেকে আড়াই টাকা বেশি দাম দিচ্ছেন।

ট্রেডিং কর্পোরেশন অফ বাংলাদেশের (টিসিবি) মতে, দেশে প্রতিদিন ৪৫ থেকে ৫০ মিলিয়ন পিস ডিমের চাহিদা রয়েছে, যেখানে দৈনিক উৎপাদন ৪৫ মিলিয়ন পিসের সামান্য বেশি।

সে হিসাবে ডিম প্রতি ভোক্তার আড়াই টাকা করে বেশি দিতে হলে, সম্মিলিতভাবে তাদের প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা অতিরিক্ত দিতে হচ্ছে। এতে দুই সপ্তাহে গ্রাহকদেরকে প্রায় ২০০ কোটি টাকা বেশি দিতে হয়েছে।

ভোক্তাদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের দুর্বল বাজার তদারকি, অব্যবস্থাপনা এবং সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের একজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘ডিমের দাম বেশি, কিন্তু মাত্র এক সপ্তাহ আগেও আমরা প্রতি ডজন ১২৫ টাকায় বিক্রি করছিলাম। এখন, তেজগাঁও পাইকারি বাজারে দাম প্রতিদিন বাড়ছে। আমরা কীভাবে কম দামে বিক্রি করব?’

ঢাকার খুচরা বিক্রেতারাও একই উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে জানান, পাইকারি পর্যায়ে দাম কমানো ছাড়া খুচরা বিক্রেতাদের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা অসম্ভব।

পুরান ঢাকার কাপ্তান বাজারের একজন পাইকারি ডিম ব্যবসায়ী বলেন, ‘বর্ষাকালে মাছ ও মাংসের দাম বেশি থাকায় ভোক্তারা ডিমের দিকে বেশি ঝুঁকছেন। তবে চাহিদার সঙ্গে সংগতিতিপূর্ণভাবে সরবরাহ বাড়েনি, যার ফলে বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।’

তেজগাঁওয়ের একজন পাইকারি বিক্রেতা টাইমস অব বাংলাদেশকে বলেন, ‘বর্ষাকালে উৎপাদন কম থাকায় মাছের দাম বেড়েছে। ফলে মানুষ আরও বেশি করে ডিম খাওয়ায়, দাম বাড়ছে।’

চট্টগ্রামে গত মাসেও ডিমের দাম অনেক বেশি ছিল। এবার তা ডজনে আরও ২০ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে ঢাকার বাইরে প্রতি ডজন সাদা ডিম ১৩৫ টাকা এবং লাল ডিম ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *