ডাকসু নির্বাচন: নারী ও অনাবাসিক ভোটে নজর সবার

টাইমস রিপোর্ট
6 Min Read
নারী ও অনাবাসিক ভোটাররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারেন। ছবি: বাসস।

আসন্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা নারী এবং অনাবাসিক ভোটারদেরকে ফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন। সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রার্থীদের অতীত কর্মকাণ্ড, বিশেষত ছাত্র অধিকার নিয়ে তাদের সক্রিয় ভূমিকা, ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া হবে। তারা আরও মনে করেন, শীর্ষ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা নারী প্রার্থীদের উপস্থিতি নির্বাচনে নতুন মাত্রা যোগ করবে।

মোট ৩৯ হাজার ৭৭৫ ভোটারের মধ্যে ১৮ হাজার ৯০২ জনই নারী, যা মোট ভোটারের প্রায় ৪৭.৫ শতাংশ। অন্যদিকে, প্রায় অর্ধেক ভোটারই হলের বাইরে অবস্থান করেন। হল প্রভোস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, আনুমানিক ১৮ হাজার থেকে ১৯ হাজার ভোটার বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের বাইরে থাকেন।

নারী ভোটারদের সংখ্যা প্রায় অর্ধেক হলেও, কেন্দ্রীয় ২৮টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ৪৬২ প্রার্থীর মধ্যে মাত্র ৬০ জন নারী, যা মোট প্রার্থীর ১৩ শতাংশেরও কম। হল সংসদের নির্বাচনেও একই চিত্র দেখা গেছে। ২৩৪টি হল পদের বিপরীতে এক হাজার ১০৮ জন প্রার্থীর মধ্যে মাত্র ১৮৮ জন নারী, যা ১৭ শতাংশ।

ডাকসু নির্বাচন
জুলাই অভ্যুত্থানে আহত সানজিদা আহমেদ তন্নি ডাকসু নির্বাচনে মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেছেন। ছবি: সংগৃহীত

নারী ও অনাবাসিকদের দিকে নজর
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কারী ও সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা উমামা ফাতেমা টাইমস অব বাংলাদেশ-কে বলেন, ‘নারী ও অনাবাসিক ভোটাররা এবার ফয়সালাকারী হয়ে উঠতে পারেন। আমাদের প্যানেল (স্বাধীন ছাত্র ঐক্য) তাদের আকৃষ্ট করতে কাজ করবে এবং নিশ্চিত করবে তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করে।’

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল (জসদ) প্যানেল থেকে সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা তানভির আল হাদি মায়েদও বলেন, ‘আমরা নির্দিষ্ট কোনো ভোটার গোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি না, তবে নারী ও সংখ্যালঘু ভোটাররা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারেন।’

ছাত্র ফেডারেশন প্যানেল ভিপি ও জিএস পদে প্রার্থী দেয়নি। এজিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা আরমানুল হক বলেন, ‘আবাসন সংকট নিয়ে যেসব ছাত্র সরব ছিলেন, তারা এবার বাড়তি সমর্থন পেতে পারেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেসব প্রার্থী লিঙ্গ, ধর্ম বা জাতিগত বৈচিত্র্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, তারা বাড়তি সুবিধা পাবেন। আর যারা সহ-শিক্ষা বা আদিবাসী পরিচয়ের বিরোধিতা করেন, তারা বিপাকে পড়তে পারেন।’

ডাকসু নির্বাচন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে ডাকসু নির্বাচনে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করে ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেল। ছবি: টাইমস

ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা ও প্রশাসনের ভূমিকা

বামপন্থী প্রগতিশীল জোট প্রতিরোধ পরিষদের প্রার্থী ফারিয়া মতিন মনে করেন, ‘এই নির্বাচনে ব্যক্তি পর্যায়ের জনপ্রিয়তা বড় ভূমিকা রাখতে পারে।’ তিনি সাহিত্যে ও সংস্কৃতি সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগ এবার নির্বাচন করছে না, তাই নির্বাচনের ধরন আলাদা হবে। নারী ভোটাররা গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু সক্রিয় রাজনীতিতে তাদের অংশগ্রহণে নানা বাধা রয়েছে। সবাই ভোটকেন্দ্রে আসবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অবশ্যই নিরপেক্ষ ও সুরক্ষিত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।’

নির্বাচনকে ঘিরে অভিযোগ
ছাত্রদল প্রশাসনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছে। তারা অভিযোগ করেছে, ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে গেলে ছাত্রদল নেতাদের বাধা দেওয়া হয় এবং নিরাপত্তা কর্মীরা তখন নীরব ছিলেন। ১৮ আগস্ট মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস এসব অভিযোগ তুলে ধরেন।

বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক স্টুডেন্ট কাউন্সিল প্যানেল থেকে ভিপি পদপ্রার্থী আবদুল কাদের বলেন, ‘নারী, অনাবাসিক ও সংখ্যালঘু ভোটাররা এবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। এদের অনেকেই প্রতিদিন নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন, তাদের অধিকার উপেক্ষিত হয়। যে প্রার্থীরা এসব বিষয়ে সোচ্চার, তারাই সুবিধা পাবেন।’

জামায়াতপন্থী ছাত্রশিবির প্যানেলের প্রার্থীরা এসব বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

 

ডাকসু নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম নেওয়ার পর শিবিরের প্যানেলের সদস্যরা। ছবি: জান্নাতুল ফেরদাউস/টাইমস
ডাকসু নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম নেওয়ার পর শিবিরের প্যানেলের সদস্যরা। ছবি: জান্নাতুল ফেরদাউস/টাইমস


আন্দোলনে নেতৃত্ব দিলেও নির্বাচনে পিছিয়ে নারীরা

গত জুলাই মাসের আন্দোলনে নারীরা সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিলেও সরকার পরিবর্তনের পর রাজনৈতিক অংশগ্রহণে পিছিয়ে পড়েছেন। ডাকসু নির্বাচনেও সেই চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ২৮টি পদের জন্য বৈধ ৪৬২ প্রার্থীর মধ্যে মাত্র ৬০ জন নারী, যা ১৩ শতাংশেরও কম। মোট ৫০৯ জন মনোনয়নপত্র জমা দিলেও যাচাই-বাছাইয়ে ৪৭টি বাতিল হয়েছে।

পদের ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ৪৮ জন প্রার্থীর মধ্যে মাত্র ৫ জন নারী। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৯ জনের মধ্যে মাত্র একজন নারী। সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ২৮ জনের মধ্যে ৪ জন নারী। সমাজসেবা, পরিবহন এবং আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে কোনো নারী প্রার্থী নেই।

মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, ক্যারিয়ার উন্নয়ন, মানবাধিকার ও আইন, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ, ক্রীড়া, গবেষণা ও প্রকাশনা এবং সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক পদে নারী প্রার্থীর সংখ্যা খুবই কম।

তবে কমনরুম, রিডিং রুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে তুলনামূলকভাবে বেশি নারী প্রার্থী রয়েছেন- এই দুটি পদের ১১ জন প্রার্থীর মধ্যে ৯ জনই নারী।

সাধারণ সদস্য পদে ২১৫ জন প্রার্থীর মধ্যে মাত্র ২৪ জন নারী।

আগামী ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ডাকসু নির্বাচন প্রথমবারের মতো আবাসিক হলের বাইরে অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয় ২৯ জুলাই, এবং সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৯ সালে।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *