ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ‘নিরপেক্ষতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, ‘জাকসু নির্বাচনে শুধু ছাত্রদল নয়, বিভিন্ন প্যানেল, স্বতন্ত্র প্রার্থী, এমনকি দায়িত্বপালনকারী অনেক শিক্ষক পর্যন্ত নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। নিশ্চয়ই সেখানে কোনো না কোনো কারণ আছে।’
শুক্রবার সকালে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের এসব কথা বলেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তার মতে, সেখানে কোনো কারণ আছে বলেই এই প্রশ্ন উঠেছে।
ডা. জাহিদ বলেন, ‘কাজেই আমার বক্তব্য থাকবে অত্যন্ত সুস্পষ্ট। দেশে ২০১৪-তে ভোটারবিহীন নির্বাচন হয়েছে, ১৮ সালে দিনের ভোট রাতে হয়েছে, ২৪-এ “আমি-ডামি” নির্বাচন হয়েছে। কাজেই বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি আস্থা রাখতে চায়। যারা এ সমস্ত বিষয়ে সংশ্লিষ্ট তাদের উচিত হবে এমন কোনো নির্বাচন আয়োজন না করা যে নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে প্রশ্ন আসবে, মানুষ দ্বিধাগ্রস্ত হবে, নির্বাচন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো সরে যাবে।’
এসময় ডাকসু নির্বাচনে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিক তরিকুল ইসলাম এবং জাকসুতে নির্বাচনের দায়িত্ব পালনকালে শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন তিনি।
দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভক্তি দেখা দিলে স্বৈরাচার ফেরার পথ সুগম হবে বলে মনে করেন জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, কোনো বিভেদ-বিভাজন আপনাকে-আমাকে শক্তিশালী করবে না। মনে রাখতে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে থাকলেই স্বৈরাচার ফেরত আসার পথ সুগম হবে না।’
তার মতে, কেউ যদি স্বৈরাচারকে পুনর্বাসিত করতে চায় তাহলেই কেবল এই ধরনের প্রহসনমূলক নির্বাচন ব্যবস্থার আয়োজন করবে। আর সেটি হলে তা সত্যিকার অর্থে শেষ বিচারে ভালো হবে না।
তিনি বলেন, ‘এখনো সময় আছে, সবার প্রতি আহ্বান আপনারা সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হন। গণতন্ত্রের জন্য যারা লড়াই করেছেন তারা কোনো অবস্থাতেই বিভাজনের রাজনীতিতে যাবেন না। ঐক্যের রাজনীতিতে আসুন। জনগণের মনের ভাষা বুঝতে চেষ্টা করুন। জনগণের উপর দায়িত্ব দিন।’
‘যারা এই সকল প্রক্রিয়ার (নির্বাচন প্রক্রিয়া) সঙ্গে সম্পৃক্ত তাদেরকে বলব, বামেও যাবেন না ডানেও যাবে না, মধ্যবর্তী অবস্থা অবলম্বন করুন এবং ভোটারদের সঙ্গে জনগণের সঙ্গে পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলুন। কোনোদিকে হেলে পড়ার দরকার নেই। আপনি আপনার নিরপেক্ষতা দিয়েই প্রমাণ করবেন এবং আগামী দিনের ভবিষ্যৎ স্বীকৃতি দেবে যে আপনার অবস্থান কী ছিল।’
দেশের কোনো নির্বাচন থেকে কেউ সরে দাঁড়াবে, শিক্ষকরা সরে দাঁড়াবেন; এটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
নির্বাচনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে
এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আপনারা লক্ষ্য করছেন, ইদানিংকালে অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে বাংলাদেশকে পিছিয়ে দেওয়ার জন্য, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে বিপথগামী করার জন্য, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে প্রলম্বিত করার জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্র দেশ এবং বিদেশ থেকে হচ্ছে। এখানে পলায়নকৃত স্বৈরাচার অথবা রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি তলে তলে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে, আঁতাত করছে যাতে বাংলাদেশ গণতন্ত্রের পথে পরিচালিত হতে না পারে। বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে একটি মডারেট ডেমোক্রেটিক কান্ট্রি হিসেবে যে তার সুনাম সেটি রাখতে না পারে।’
দেশের গণতন্ত্রকে পিছিয়ে দেওয়ার, গণতন্ত্রকে প্রলম্বিত করার কোনো অপচেষ্টা সফল হবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘শেষ বিচারে জনগণের জয় হবে, জয় হবে গণতন্ত্রের, জয় হবে মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের। জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে আগামী দিনের সংবিধান কী হবে, আগামী দিনের সংস্কার কী ধরনের হওয়া উচিত, জনগণ যাদেরকেই নির্বাচিত করে সংসদে পাঠাবে তারাই ৩৬ জুলাইয়ের যে আদর্শ এবং মানুষের আকাঙ্ক্ষা উপরে ভিত্তি করেই আগামী দিনে সংসদে সংস্কার হবে।’