যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘হুঁশিয়ার’ করতে সামরিক শক্তির বিশাল প্রদর্শনী করল চীন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ অবসানের ৮০ বছর পূর্তিতে বিশ্ব নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে জমকালো সামরিক কুচকাওয়াজ করেছে বেইজিং। তিয়ানআনমেন স্কয়ারে হাজারো সেনা, অত্যাধুনিক অস্ত্র এবং ট্রাম্পের সঙ্গে কূটনৈতিক দুরত্ব মেনে চলা বিশ্বনেতাদের নিয়ে এ যেন অঘোষিত ‘ট্রাম্পবিরোধী’ সুসংগঠিত প্রচারের এক চেষ্টা।
বিবিসির খবরে বলা হয়, হাজার মাইল দূরে, ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসে বসে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের ঐতিহাসিক মেলবন্ধন দেখেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এক মঞ্চে একই সময়ে তিন নেতার মিলনকে ‘যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী’ ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘তারা চেয়েছিল আমি দেখি, আর আমি দেখেছি।’
চীনের এই শক্তি প্রদর্শনীকে ‘বেশ আকর্ষণীয়’ বলে উল্লেখ করেছেন ট্রাম্প। তবে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে ট্রাম্প বিশ্ব অর্থনীতিতে যে টালমাটাল অবস্থা তৈরি করেছেন, তাকে টেক্কা দিতেই চীনের স্পষ্ট বার্তা-‘নতুন শক্তির উদয় ঘটেছে, গত শতাব্দীর মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থার বিকল্প হয়ে উঠতে চায়।’
বিবিসির বিশ্লেষক অ্যান্থনি যুর্কারের মতে, চীন যখন কুচকাওয়াজ ও বিশ্বনেতাদের বরণে ব্যস্ত, তখন পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট কারোল নাভরোস্কির সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। সেখানেও চীনের সঙ্গে রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার সখ্যতার বিষয়টি উঠে আসে। বিপরীতে ট্রাম্পের মন্তব্য ছিল বেশ ‘ঘোরালো, মিশ্র, উদ্বেগ, অভিমান ও দ্বিধার’ এক মিশেল।

ট্রাম্প প্রশাসনের সাবেক ভেটেরান’স অ্যাফেয়ার্স সেক্রেটারি রিচার্ড উইলকি বলেন, ‘এটি ইতিহাস পুনর্লিখনের প্রথম পদক্ষেপ। জাপানের বিরুদ্ধে বিজয়ে চীনা কমিউনিস্ট নয়, মূলত মার্কিন ও চীনা জাতীয়তাবাদী বাহিনী মুখ্য ভূমিকা রেখেছিল। চীন সে ইতিহাস থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দিতে চাইছে।’
অবশ্য কেবল সামরিক কুচকাওয়াজই নয়, চীনের সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলনও চিন্তায় ফেলেছে মার্কিন কূটকৌশলীদের। তিয়ানজিনে আয়োজিত ওই অর্থনৈতিক সম্মেলনে একই মঞ্চে দেখা গেছে শি জিনপিং, ভ্লাদিমির পুতিন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। ধারণা করা হচ্ছে, রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় পণ্যে যে ‘জরিমানা শুল্ক’ আরোপ করেছেন ট্রাম্প, সে বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন নরেন্দ্র মোদি।
বিবিসি’র ভাষায়, ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ বাণিজ্যনীতি একদিকে বিশ্বের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মানচিত্র বদলে দিচ্ছে অন্যদিকে শক্তিশালী করছে ‘ট্রাম্পবিরোধী জোট’। চীন-রাশিয়া-ভারত-উত্তর কোরিয়ার ‘সম্ভাব্য ঐক্য’ তার যোগ্য উদাহরণ।

রিচার্ড উইলকি বলেন, ‘কোরিয়া, জাপান, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের বর্ধিত শুল্ক মেনে নেওয়া দেশগুলোর সবাই জানে, তাদের জন্য আসল হুমকি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য নয়, বরং চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক শক্তি।’
অবশ্য দেশটির অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদরা বলছেন, বিশ্বরাজনীতিতে হস্তক্ষেপের চেয়ে ট্রাম্পের আগ্রহ যুক্তরাষ্ট্রের আশেপাশে অঞ্চল-যেমন গ্রিনল্যান্ড, পানামা ও কানাডার দিকেই বেশি। তবে বিশাল এই অঞ্চলকে যুক্তরাষ্ট্রের অধিনস্ত করাও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।